মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০১১

অতন্দ্রিতা আমার এমন ক্ষয়


মেঘে মেঘে চিঠি লিখে ক্লান্ত প্রহরে ঘুমের আয়োজন
একটা কালো পাখি ডানায় গেঁথে আনে মৃত্যুপোড়ামন
তার কণ্ঠ জড়িয়ে মরে যেতে ইচ্ছে করে খুব

স্মৃতির আড়াল থেকে আমাকে নষ্ট করে দিও প্রিয় চোখ, আমি সকলের ভেতর দৃশ্য বুনে দিতে চাই
তারা জানে না, তাদের করোটির ভেতর ঘুন, মগজে অসুখ, তারা ভুলে গেছে সমৃদ্ধরমন, তাদের চোখে কোন দৃশ্য নেই

পেয়ারাবনের পাশে মৃতের উদ্যান। সেখানে বসে আছে কেউ চিঠির প্রতীক্ষায়, জলের সন্ধানে নেমেছে দুপুরের কাক। আর মন্দাক্রান্তার নীলচোখের পরিশ্রুত দৃষ্টি লেগে আছে চোখের কোণে। এখন একটা কালো পাখি উড়তে গিয়ে ভেঙ্গে ফেলবে ডানা; তার পাশে জেগে থাকবে সারারাত মায়াবী আঙুল। তুমি ঘুম চেনোনা, অথচ তোমার শরীর জুড়ে অবসাদ।
সয়ে নিয়েছি রাত ...

মন্দাক্রান্তা, চোখের গহিন দেখো, কিছু নেই..... রক্তমাংশজল

প্রতিটি যুদ্ধেই নিজের লাশের উপর দাঁড়িয়ে দেখেছি, আমি পরাজিত বিধ্বস্ত সৈনিক

কার স্পর্শপুলকে অতন্দ্রিতা আমার এমন ক্ষয়?

বন্ধুর ছোরাটি বাম পাঁজরে ধারণ করে তার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে কোন রসিকতা নেই। আমার আঙুলগুলো কেঁপে কেঁপে অস্থির।

তার ঘুম মাখা চোখের দৃষ্টিতে কালো চিল, দূরে কোথাও গাঢ়ো সিম্ফনি

হ্যাঁ, আমাকে ধারণ করার মতো হৃদয় তোমার নেই, তুমি হৃদয়হীনতায় ভুগছো
১০
একটা পাখি ভুল করে ডেকে যাচ্ছে রাত
চোখের কাছে এসেই ফুরিয়ে যাচ্ছে দৃশ্য
জেগে উঠছে ক্রমশ মৃত্যুগামীমন
১১
প্রকৃত অর্থেই আমরা কেউ ভালো থাকতে চাইনি, কিন্তু বিদায় কালে পরস্পর পরস্পরকে ভালো থাকতে বললাম
১২
নিজে নিজে পুড়ে মরি নিজের অনলে
তুমি একটা সুর তুলে বাঁশি বাজাও
বাঁশি করুণ তার ক্ষতের যাতনায়

রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০১১

বিষলতিকার স্পর্শে গাঢ়োনীল হাহাকার


তার অনবদ্য শরীর জুড়ে আমার চুপচাপ স্পর্শের বসবাস। গুছিয়ে রেখেছি ফিরে যাওয়ার ঝোলা। কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়েই প্রস্থান। তার শেষ চুমুতে ঠোঁট সিক্ত করে চলে যাওয়াও হয়তো সময়ের। কিন্তু কোথাও আবদ্ধ সামাজিক মন। শরীরের চেয়ে ঘন ও পার্থিব সময় আরো ঘন হয়ে ঘিরে আসে। চোখ জুড়ে ভাসিয়ে দেয় সহস্র দৃশ্য। আমি তার ঠোঁটের পাশে জেগে থাকা কাশবন। আড়ালে আখের খেত, বাঁশবন আর একটা দীঘল পথ কোন এক তালপুকুরের পাশে পড়ে থাকে। সে তখন ঘুমের ওষুধে নিষিক্ত শরীর। খুব কাছে জড়ো হওয়া রোদ। বাতাসে মাখা সুগন্ধী পেয়ে ঘুমশরীরে জেগে ওঠে সূক্ষ্মতীক্ষ্মলোম। সোনালি শরীর জুড়ে কাশবন স্পর্শে স্পর্শে খুন। তার কালো চুলের পাশে নদী। কতবার সে নদীতে ডুবে মরি!
একটা শহর জুড়ে বৃষ্টি নেমে আসে তার চলে যাওয়ার পথে চোখ ফিরাইনি বলে। কারো নথে ঝুলে থাকা স্বপ্ন স্পর্শপুলকে খুন হতে থাকে। শহরের পাশে নদী রুগ্ন আর গ্রামের পাশে বেঁচে থাকা বাতাস কারো স্তনে বিষলতিকার স্পর্শে গাঢ়োনীল হাহাকার। বৃষ্টিতে চাঁদ ধুয়ে যায়, বৃষ্টিতে জেগে ওঠে চর, সিক্ত চরাচর।
মধুবনে বুনে দিচ্ছি ধুপ, রোদচশমার আড়ালে ধারালো চোখ। প্রতিটি বাঁকেই গভীর দৃশ্য। একটা নীল সাইকেল আর পথের মাটিতে সন্ধি। ক্রমশ: নেমে এলে সন্ধ্যা কোন এক অগভীর জলাশয়ে ফেলে আসা পথটুকুর স্মৃতি জিইয়ে রাখি। বাড়ি ফিরে এসে দেখি মায়ের উনুনে শাদা ভাতের ফেনা। বাবার হাতের ঠোঙ্গায় শুকনো সন্দেশ। বাবা গভীর কন্ঠে কাছে ডেকে হাতে তুলে দিয়ে বলেন- 'খাও'। আমার চোখ পড়ে থাকে মধুবনে, সেখানে বুনে এসেছি ঝাউগাছ। রোদচশমা সহ ভুলে ফেলে এসেছি চোখ। বাবার কাছে উবু হয়ে বসি। মা পাশে এসে বসে হাত রাখেন শরীরে। বলেন, ভাত খা। আমি আর বাবা ভাতে আর জলে পাশপাশি থাকি। বাবা বলেন, ওপাশে বারান্দায় ঝুলে পড়েছে তোমার শৈশব, তুমি ঘুমাও। মা আঁচলে মুছে দিতে থাকেন ক্লান্তি।
তাঁদের বলতে সাহস করিনি, আমি আত্মহত্যা করে ঘরে ফিরেছি।

শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১১

এই বৃষ্টি জমিয়ে রেখেছি কোথাও

চোখের গহিনে কোথাও টানিয়ে রেখেছি দৃশ্যগুলো। একেকটা টেনে সামনে নিয়ে আসি, রক্তের ভেতর চুপচাপ আলোড়ন। লোমশ অন্ধকারে তলিয়ে যেতে যেতে শুনি তার ডাক, বহুদূর থেকে।

আমি সাড়া দেই-
: হুমম
: কি করেন?
: কিছু না।
: আমি এই মাত্র একটা গল্প পড়লাম। এত্তো জোসস একটা গল্প....
কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করি। লালন করি ভেতরের শুন্যতার আলোড়ন....
তিনি বলেন-
: আমি ভাবছি..... আমি কি ভাবছি জানেন?
: না
: আপনি একটা অভদ্র। আপনিতো জিজ্ঞেস করবেন যে, কি ভাবছেন?
আমি তখন একটা মেঘ আঁকি। তারপর মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়ি লজ্জায়। এদিকে ঝুঁকে পড়ে চাঁদ। অসভ্য রোদের আলোয় পোড়া শরীরের ক্ষতও শিল্প হয়ে ওঠে। আমি সে দৃশ্য চোখে টানিয়ে রাখি। আর তার কণ্ঠ ভেঙ্গে ভেঙ্গে পরিশ্রুত নরম জোসনা। আমি প্রতিটি উচ্চারণে ঘুম ডেকে আনি। তারপর কোথাও বৃষ্টি নামে। আর আমি ঘুমে তলিয়ে যেতে যেতে শরীরে জড়িয়ে নেই মায়ের পুরনো শাড়ি দিয়ে তৈরি নরোম কাঁথাটা। ঘুম থেকে জেগে দেখি তার সবুজ শরীরে জমা শিশির।