শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১১

দিন যাপনের খসড়া খাতা ১

০১.০১.২০১২

ভাবছি তুমি আমাকে ভালোবাসো কেন? বুড়িয়ে গেছিতো। সাতাশ পাড়ি দিচ্ছি। সামনের সেপ্টেম্বরে আটাশ হয়ে যাবে। অথচ জীবন পচা ডিমের গন্ধ ছড়াচ্ছে।

মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১১

ভেতরে নীল রঙের ষড়যন্ত্র

একটা নির্বোধ পোকা কেটে গেছে আমার প্রিয় শীতের সোয়েটার
এটা পরে আমি আর বাইরে যেতে পারি না, হুহু করে শীত ঢুকে যায়

তবু পোকাটার জন্য আমার মায়া হয়, নাম না জানা দাঁতাল পোকা

শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১১

এক বাক্যের গল্প

গল্প:০১>
একদিন নদী থেকে আঁজলা ভরে জল নেয়ার সময় আঙুলের ফাঁক দিয়ে সব জল পড়ে যেতে দেখে ঠাকুরদা শঙ্কিত হয়ে বলেছিলেন, 'তোর আঙুলের ফাঁক দিয়েতো তুই তোর ভবিষ্যত ফেলে দিবিরে!' তারও বহুদিন পর মনে হলো সত্যি সত্যিই বুঝি আঙুলের ফাঁক দিয়ে আমি আমার সব কিছু ফেলে এসেছি
গল্প:০২>
সারাজীবন নয়টা-ছয়টা অফিস করে আধপেটা খেয়ে একটাকা দুইটাকা করে জমিয়ে এবং শেষ বয়সে পেনসনের টাকাটা পেয়ে তিনি যখন বাড়ি করছিলেন তখন বাড়ির ডিজাইন, ইঞ্জিনিয়ার, শ্রমিক, ইটকাঠপাথর, এলাকার ছেলেপেলে ইত্যাদির ধকল সইতে না পেরে বুক চেপে মরে গেলে মসজিদের মাইক থেকে তার মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা হলে ঘোষকের সাথে সাথে আমরাও ইন্নালিল্লাহে ওয়াইন্নাইলাহে রাজিওন বললাম
গল্প:০৩>
কালো মেয়েটি ফেয়ার এন্ড লাভলি মেখে মেখেও ছেলেটির উদাসীনতায় নিজেকে ব্যর্থ ভেবে 420 আব্দুল করিমের সাথে চলে গেলে, উদাসীন ছেলেটি মেয়েটির কালো অথচ মিষ্টি মুখশ্রীর কথা স্মরণ করে ভাবে- উড্ডীনকালে আলোর বিপরীতে সকল পাখিই কালো দেখায় আর মানুষ মূলত কথিত স্রষ্টার ন্যায় প্রশংসা পছন্দ করে
গল্প:০৪>
সামান্য সরকারী চাকুরে বাবার শুধু বেতনের টাকায় শহরের সংসার খরচ চালিয়ে গ্রামের দাদা-দাদীকেও কিছু টাকা পাঠিয়ে মাস শেষে যখন শূন্য হাত তখন অবিবেচক আমার একটা ফুটবলের আবদার তাঁকে বিব্রত করে এবং তিনি তা কিনে দিতে অস্বীকৃতি জানালে সারা বিকাল কেঁদে টেদে হতাশার ঘুম শেষে জেগে পাশে একটা শাদাকালো ফুটবল আবিষ্কার করে আনন্দে আটখানা হয়ে দেখি সন্ধ্যা মিলিয়ে গেছে
গল্প:০৫>
বালকটি মসজিদের ইমাম হুজুরের কাছে কুরআন পাঠ শিখতে গেলে ইমাম হুযুর তার ছোট ভাইয়ের কথা স্মরণ করে কাঁদে আর কুরআন ছুঁয়ে ছেলেটিকে শপথ করায় যে হুযুর যা বলবে বা করবে তা অন্য কাউকে কোনদিন কোনসময় কোনভাবেই বলা যাবে না এবং ছেলেটি সরল মনেই এই শপথ করে তারপর হুযুর তাকে আড়ালে অন্ধকারে ডেকে নিয়ে যায় এবং অন্ধকারে রক্তাক্ত হয়ে ছেলেটি নরপশুর কুৎসিত রূপ যখন আবিষ্কার করে তখন সেই কথিত পবিত্র গ্রন্থের কোন পৃষ্ঠায় সেই রক্তের দাগ লেগে থাকে কিনা জানতে চায়লে পীরে আওলিয়া হুজুরে কেরামত দরবারে চিশতী মাওলানা আবদুল বাসেদ ইসলামপুরী প্রথমে বিভ্রান্ত হন অতঃপর গলা খাকড়ি দিয়ে “সব আল্লাহু রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছা, তিনিই পবিত্র রাখেন সকল অপবিত্রতা থেকে” বললে মাজহারুল ইসলাম মুন্না মনে মনে বলে ওঠে ‘হারামজাদা’
গল্প:০৬>
বাইগনবাড়ি স্টেশনে মাঝরাতে ট্রেন থেকে নেমে বাড়ি ফেরার জন্য কোন রিকশা বা ভ্যান না পেয়ে অমাবশ্যার অন্ধকারে একা একা হেঁটেই রওয়ানা হলে একটি কুকুর তার সঙ্গী হয় কিন্তু মনতলা বাজার পেরুতেই কুকুরটি নিরুদ্দেশ হলে তার সদ্যমৃতা স্ত্রীর কথা স্মরণ হয় এবং বাকীটা পথ একাই চলতে হবে ভেবে বুকের ভেতর একটা শূন্যতা অনুভব করতে থাকেন
গল্প:০৭>
ঢাকা ফেরৎ শেফালি তার গর্ভের সন্তানের জনক 'সাইদুলমিয়া' দাবী করলে সাইদুলমিয়া তা অস্বীকার করে কিন্তু সমাজের গণ্যমান্য জঘন্য ব্যক্তিবর্গ সালিশে তাকে লুচ্চা, লম্পট অভিহিত করে কাজী ডেকে শেফালির সাথে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়ার পর বাসর রাতেই সাইদুলমিয়া বাড়ির পাশের কামরাঙা গাছের ডালে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে কারণ সে কাউকেই বুঝাতে পারেনি কেবল চুম্বনে গর্ভসঞ্চার হয় না
গল্প:০৮>
জ্ঞানের ঘাটে রাতের অন্ধকারে চুপচাপ দাঁড়িয়ে নীরবে করিমন বিবি কাঁদতে থাকার সময় হঠাৎ শহর আলি তার পাশে এসে দাঁড়ালে শহর আলির শরীরের ঘ্রাণ তাকে মোহিত করে এবং শহর আলি তাকে বুকে টেনে নিলে সালমার লাল জুতা আর রঙিন শাড়ির মতো তারও লাল জুতা আর রঙিন শাড়ি না থাকার ব্যথা ভুলে যায়
 গল্প:০৯>
উঠোনে ধরানো আগুন থেকে পোড়া মিষ্টি আলুর খোসা ছাড়িয়ে একটুকরো ভেঙ্গে মুখে দিয়ে চিবুতে চিবুতে ভাবে- 'গত বছরের তুলনায় এবার শীত কি বেশি পড়লো, নাকি 'সে' চলে যাওয়ায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে!' যদিও প্রতিটি শীত চলে গেলে আমরা পরিযায়ী পাখির কথা ভুলে যাই
গল্প:১০>
সে তার অবসন্ন দেহটি ছড়িয়ে দেয় মেঠোঘরের শীতল বিছানায় তখন নৃত্যরত জোছনা চালার ফাঁক দিয়ে ঢুকে জন্ম দেয় শাদা ও নরোম দ্বিতীয় মানুষটির তারপর সে আঙুলে জড়ায় স্পর্শ আর কোথাও একতালে গাঢ়ো অথচ ধীর লয়ে বেজে ওঠে স্প্যানিশ গিটার
গল্প:১১>
স্কুলে দেরী করে আসায় প্রথম বেঞ্চে স্থান না পেয়ে প্রতিদিন শেষের বেঞ্চে বসা আমার পাশে প্রথম সে বসে এবং স্কুল শেষে আমাকে বন্ধু ডেকে তার বাসায় নিয়ে গিয়ে তার অনেক খেলনা দিয়ে দু'জনে দীর্ঘ সময় খেলি কিন্তু ফেরার সময় তার একটা খেলনা পাওয়া যাচ্ছে না বলে আমার ব্যাগ সার্চ করে সেখানে কোন খেলনা না পেয়ে বলে – ‘সরি , দোস্ত’ আর আমি কোনদিন কাউকে বন্ধু ভাবতে পারি না
গল্প:১২>
দূরে কোথাও নিশিপাখি কর্কশ কণ্ঠে ডেকে ওঠলে ভয়ে সে আমার ঘনিষ্ট হয়ে শক্ত করে হাত ধরে থেকে ভয় দূর করে অথচ আর একটু পথ হাঁটলেই নির্জন ডুবাটার পাশে আমি তার গলা চেপে ধরবো
গল্প:১৩>
সুপর্ণার বাম স্তনে একটা কালো তিল আছে এই কথা ক্যাম্পাসে রতন ছড়িয়ে দিলে সে কথা সোহানের কানেও যায় আর সোহান যখন সুপর্ণাকে অবিশ্বাসের চাবুকে আঘাত করে তখন প্রচণ্ড আহত সুপর্ণা ভাবে কোন কুক্ষণে সে তার রুমমেট আবিদাকে জানিয়েছিলো তার একটি গোপন তিলের কথা
গল্প:১৪>
ছোট্ট মেয়েটির গাল টিপে আদর করে "এমন কিউট একটা বেবিকে রেখে তার মা কাজে যায় কী করে, হুমমম? আপনাদের তো অভাব নেই, ভাবীর চাকরি করতে হয় কেন বুঝি না" এই কথা বলে সে মেয়েটির বাবার মন ও মনোযোগ আকর্ষণ করে আর অচিরেই আমরা একটা খেলা জমে উঠতে দেখবো কেননা শী ইজ অ্যা গেইমার
গল্প: ১৫>
এ এক আজব ব্যাপার ঘটে যায় দুপুরে যখন সে একচোখাবৃদ্ধের দেয়া হলুদ মাল্টা ফল কেটে স্বামীর পরিবর্তে গোপন বন্ধুকে দেয় তখন সে দেখে মাল্টা থেকে লাল ডালিমের রস বেরোয় আর তার নিজের উরুসন্ধি বেয়ে নেমে আসে চাক চাক রক্ত এবং স্বামীটাও হয়তো তখন পান করছিলো লাল ডালিমের রস কিংবা বেকুবটা তখন হলুদ আলোর বদ্ধঘরে বসে হিসাব কষছিলো অথবা মাইলের পর মাইল সূর্যতাপে দগ্ধ হয়ে শূন্য মাঠে ঘেমে ঘেমে হাঁটছিলো
গল্প: ১৬>
বৃদ্ধ রিকশাওয়ালাটিকে জোয়ান রিকশাওয়ালাটি দ্রুতগতিতে অতিক্রম করে গেলে বৃদ্ধটি “অই পইড়া গেছে!” মিথ্যা বলে, ফলে তরুণ রিকশাওয়ালাটি গতি কমিয়ে থামে আর বৃদ্ধটি তাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে গিয়ে মিট মিট হাসে এবং অনতিবিলম্বে তরুণ রিকশাওয়ালাটি পুনরায় দ্রুতগতিতে বৃদ্ধকে অতিক্রম করতে চাইলে প্রথমে সাইড দেয় কিন্তু পরক্ষণেই রাস্তার মাঝখানে চলে আসে তখন তরুণ রিকশাওয়ালাটি রিকশার গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে র্দুঘটনার শিকার হলে বৃদ্ধটি চোয়াল শক্ত করে চাবিয়ে চাবিয়ে বলে, ‘শালার জৈবন’
গল্প: ১৭>
এ্যাকুরিয়ামের মাছগুলো কথা বলা শিখে গেলে আমরা একটি একটি করে তাদের সবকটিকে মেরে ফেলে নিঃশ্চিন্ত হলাম
গল্প: ১৮>
চতুর্থবারের মতো আত্মহননে ব্যর্থ হলে সে আমার পিঠে হাত রেখে গাঢ়ো কণ্ঠে বলে, 'চুপচাপ বেঁচে থাকাই আত্মহত্যার সহজ উপায়' তখন আকাশে একটা চিল সূর্যের চারপাশে উড়ছিলো কিনা মনে নেই
গল্প: ১৯>
খরায় সকল জলাশয় শুকিয়ে সব মাছ মরে গেলে গভীর জলাশয়টির শেষ জলটুকুতে একটি পুঁটি মাছ তখন জীবিত ছিলো, তার পাশেই বাঁশের খুঁটিটিতে ক্ষুধার্ত মলিন কাতর মাছরাঙা বন্ধুটিকে বসে থাকতে দেখে- "বন্ধু, আজ দুপুর পর্যন্ত রোদ গড়ালে এই জলাশয়ের শেষ জলবিন্দুটিও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে আর তখন আমার মৃত্যু নিশ্চিত; এর চেয়ে তুমি আমাকে খেয়ে ফেল, তুমি অন্তত একদিন বেশি বাঁচবে" এই কথা বলে এবং যখন দুপুর গড়িয়ে গেল আর মাছরাঙা চোখে জল নিয়ে প্রিয় বন্ধু পুঁটি মাছটিকে খেতে শুরু করলো তখন পুঁটি মাছটি মরে যেতে যেতে তার নিজের রক্তে মাছরাঙার বুকটি লাল করে দিয়ে গেল
গল্প: ২০>
শঙ্খমিত্রার ম্যালা জল শুকিয়ে গেলো এবং অনেক নৌকার পালও বদল হলো এই ত্রিশ বছরে তবুও ফুলবানুর খোঁজ আর না পেয়ে সকলেই তাকে প্রায় ভুলে যায় আর আক্কেল মিয়াও তার শালিকা পরীবানুকে বিয়ে করে ত্রিশ বছরের সংসার যাপন করে কিন্তু মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে আক্কেল মিয়া যখন অবচেতন মনে ডুকরে কেঁদে বলে, ‘ও ফুলবানু, তুই আমারে ক্ষমা করিস ফুলবানু’ তখন পরীবানু ভাবে তার বোনের প্রতি আক্কেল মিয়ার প্রেম বুঝি চাগার দিয়ে ওঠে কিন্তু কারো কারো মনে এই প্রশ্ন উঁকি দিয়ে ওঠে যে, ক্যান আক্কেল মিয়া মরার সময় ফুলবানুর কাছে ক্ষমা চায়?
শেষ গল্প>
কিশোরী মেয়েটি তার টিউটরের প্রেমে পড়ে গেলে মা তা বুঝতে পারে এবং এক সন্ধ্যায় মা টিউটরের হাত ধরে বসে থাকে তারপর মেয়েটিকে বলে, তোমার টিউটরের মতো অসভ্য আমি দেখিনি, সে আমার হাত ধরতে চায়, আমি ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলিনি, শুধু বেতন দিয়ে বলেছি আর যেন এ বাসায় না আসে

বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১

চোখ মরে গেছে, মিথ্যা আলোয় দৃশ্য রচনা করে মন


আয়নায় মুখ দেখি। এতবার দেখা মুখ তবু অচেনা ঠেকে। এই যে জড়িয়ে যাচ্ছি অচেনা আমিতে, যখন বিস্মৃতির জঙ্গল থেকে জেগে উঠবে বিষধর কেউটে, তখন তুমি কি করবে? শুধাই আমায়। আমি একচিলতে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থেকে বার বার ঘুরে ঘুরে আমাকে দেখি। চোখের পাতায় আঁকি মৃত্যুরঙের ফুল।

নিজের ভেতর অবলুপ্ত শহর। আমি তার মেয়রকে গোপনে চিঠি লিখি।

সে বলে এই সত্যের আড়াল থেকে তুমি বেরুতে পারবে না। দেখো এই বিরান ভূমি। আমার ভেতর লাল হয়ে জমে থাকা তৃষ্ণা। তুমি আমাকে স্পর্শ কর একবার মৃত্যুর জন্য। এই আড়ালে তোমার মগ্নতা ভেঙ্গে ফেলো ঋষি। দেখো আমি উতলা পুঁই গাছ।

একটা বন্ধ ঘরে আমি তখন জেগে উঠি। রোদ।

শৈশবে আমাদের এখানে এক মহিলা ভিক্ষুক আসতেন ভিক্ষা নিতে। তার একটা চোখ পাথরের ছিলো। সে এসেই তার পাথরের চোখ খুলে আমাদের তাক লাগিয়ে দিত। তারপর আমরা আবার তার চোখ খুলে ফেলার খেলা দেখতে চাইতাম। কিন্তু সে তখন তার অনেক ক্ষতি হবে বলতো এবং ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে সে পুনরায় চোখ খুলে দেখাতে রাজী হওয়ার কথাও বলতো, আমরা তখন খেলা দেখতে নারাজ হতাম। একদিন খুব অভাবে পড়ায় সম্ভবত সে দশ টাকার বিনিময়ে তার চোখ খুলে দেখানোয় রাজী হয় কোন রকম ক্ষতিপূরণ ছাড়াই। একটা স্বচ্ছ গ্লাসে চাপকলের শীতল জলে তার পাথরের চোখটি খুলে রাখে সে, আমরা বিস্মিত হয়ে সেই চোখটিকে গ্লাসের জলে ভাসতে দেখি। বড় কুৎসিত লাগে।

বহুদিন পর নিজেকে জলে ভাসা কুৎসিত চোখ বলে মনে হচ্ছে। আমার পাপবিদ্ধ মন।

মনবাড়িতে একা একা ট্রেনকাটা রোদে দাঁড়িয়েছিলাম। অদূরেই এক জাদুকর তার ঝোলার ভেতর থেকে বের করে আনলো অনেকগুলো মরা চোখ। ঘোর লাগা চোখে আমরা সেই চোখ দেখি। দেখি রুমালের আলোড়নে মাটি হয় ধন। ছুঃমন্তরে শূণ্য থেকে ধরে ধরে আনে নতুন টাকার নোট। তবুও জাদু শেষে সে বিক্রি করে কৃমির ওষুধ।

জানি তার চোখ মরে গেছে। তবুও মিথ্যা আলোয় দৃশ্য রচনা করে মন।

সত্য এই, মানুষেরই রয়েছে মানুষের রূপ। কেউ একটা ভুল পথে অন্ধকার, আমার চোখ জুড়ে রোদ চশমা। অন্ধপাখির গান। মজে আছি ডুবোপ্রেমে, আঙুলের স্পর্শে সোনা হয় কাঠ। স্মৃতি মুছে চাষ করি শিলালিপি। মেঠোঘরে পাঠ করি দেয়াল লিখন। রাত্রি এসে ফিরে যায় ঘুম শহরের পথে একা একা। আজ কোন ট্রেন আসেনি। হেঁটে হেঁটে ঘরে ফিরি তার কাজলটানারাতে।

তরল সকল প্রতিবন্ধকতা পাশ কাটিয়ে গতিশীল, বুঝি প্রেম

সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১

স্বপ্নঘুড়ি


ছেলেটা রুদ্রঘাসে নিজেকে জড়িয়ে রাখলো বহুক্ষণ। শঙ্খমিত্রার জলে স্নান শেষে চরে হাঁটলো, দৌড়ালো এবং বসেও থাকলো চুপ করে বেশ সময়। ছেলেটা মাটিতে ঘুড়ি আঁকলো, লাল। ঘুড়িটা হঠাৎ করেই উড়ে গেল দূর। ঘুড়িটায় জড়িয়েছিলো রোদ আর ঘুড়িটা বাতাস হয়ে উড়ে। উড়ে উড়ে ছাদের কানির্শের কোন এক তারে ঘুড়িটা জড়িয়ে নেয় নিজেকে। ছেলেটি হাত বাড়িয়ে ধরতে চায় খুব, কিন্তু ঘুড়িটি নাগাল থেকে দূর। তবু ক্রমাগত সে চেষ্টা করে যায়। দূর থেকে ভেসে আসে মায়ের কণ্ঠে ডাক – মি হি র; মি হি র ; মি হি র ।

অতঃপর সে জেগে ওঠে। ভোরের আলোয় আটকে থাকা দেয়াল। তার শরীর জুড়ে কাঁপন। মায়ের ব্যস্ততা। বাবার নীল শার্টে রুদ্রের ফুল আঁকা। আজ স্নান ঘরে মিহি স্তব্ধতা। জল নেই। স্নান নেই।

আকাশটা নীল। ছেলেটির স্কুলে পড়ার ড্রেস। কাঁধে থলে বোঝাই বই। সে যখন স্কুলে যায় তখন আকাশে উড়ে সাহাবুদ্দিনের হলুদলাল ঘুড়ি। আরো কয়েকটি ঘুড়ি ওড়ে, নীল আর সবুজ। সাহাবুদ্দিনের ঘুড়ি হলুদ আর লাল মিলেই হয়। ঘুড়ি দেখতে দেখতে আর মনের মাঝে একটা লাল ঘুড়ি আঁকতে আঁকতে ছেলেটি স্কুলে যায়। সে ঘুড়ি হয়ে উড়ে উড়ে যায়।

সারাটা দুপুর জানলা দিয়ে আকাশ দেখে, পড়তে ইচ্ছে হয় না তার। লিখতেও ইচ্ছে হয় না কিছু। স্যারও কেমন ঢুলেন! একটা সাইকেল আঁকতে ইচ্ছে করে মিহিরের, কিংবা একটা চিল অথবা লাল ঘুড়ি। সাহাবুদ্দিনের হলুদলাল ঘুড়িটাকে দৈত্য মনে হয়। রঙিন রঙিন ঘুড়িগুলোকে কেটে দেয়। ওগুলো উড়তে উড়তে কতদূর চলে যায়! তার লাল ঘুড়িটাকেও সাহাবুদ্দিনের ঘুড়ি কেটে দিয়েছিলো। সে কাটাকুটি খেলতে চায়নি। কি সুন্দর উড়ছিলো ঘুড়িটা! হঠাৎ সাহাবুদ্দিনের হলুদলাল এসে প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়। সুতা টেনে টেনে নামাতে ঘুড়িটা কেটে দেয়। টানটান ঘুড়ির বুক কেটে দিতেই কেমন বাঁধন ছাড়া হতাশ প্রাণহীন উড়ে যায়। কতদূর যায়! ক ত দূ র!! আহারে লালঘুড়িটা!!

স্কুল শেষে কোচিং, তারপর ব্যাচে প্রাইভেট টিচারের কাছে পড়া শেষ করে সন্ধ্যা আর সে এক সাথেই ঘরে ফিরে। তখন সব ঘুড়ি আকাশ থেকে নেমে যায়। বাতাসে শাদা শাদা আযান ভাসে। বাসার কাছে আসতেই দেখে তাদের বাসার ছাদের কার্ণিশের কাছে সুপারি গাছটায় একটা লাল ঘুড়ি ঝুলে আছে। হয়তো কেটে এসেছে কোথাও থেকে। সে দৌড়ে ছাদে উঠে। কার্নিশের কাছে ছুটে যায়। একটুর জন্য ধরতে পারে না সে ঘুড়িটাকে। আর একটু হাত বাড়াতেই সে ঘুড়ি হয়ে উড়তে থাকে। ধাতব আঘাতের একটা ভোঁতা শব্দ শ্রবণে আর যন্ত্রণা অনুভূতিতে থাকে। আর তখন আর সন্ধ্যা থাকে না। একটা উজ্জ্বল আলোয় নীল আকাশে সে লালঘুড়িটাকে নিয়ে উড়তে থাকে। সকল কাটা ঘুড়ির মতো সে আর লাল ঘুড়িটা দূরে উড়ে যেতে থাকে।

মিহিরকে জড়িয়ে ধরে তার মা রিক্সা করে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিলেন। রক্তে মায়ের শাড়ি ভিজে যায়। মা ‘মিহির মিহির’ নামে ডাকে। কিন্তু তিনি জানেন না, মিহির তখন লাল ঘুড়ি হয়ে অনেক দূর উড়ে গেছে।

শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১১

ইচ্ছেগুলো একেকটা পাখি


যেতে যেতে মনে পড়বে তোমার স্মৃতি। আমি তখন একটা মেঠোপথ, ঝুমুর দুপুর। একটা উড়ন্ত চিল। তার পালকের ছায়ায় আহত রোদ। আলস্যে ক্ষয়ে যাওয়া গোলাপ পাপড়ি। কারো নথ জুড়ে বিষণ্ণতা নিয়ে জমে থাকা সুন্দর। তোমার নখে মুছে যাওয়া ম্লান নেইলপালিশ। ঝড়ের বাতাসে ঘূর্ণায়মান ঝরাপাতা। ঘুমে জড়িয়ে থাকা চোখের পাতা।


ইচ্ছেগুলো একেকটা পাখি। পাখিরা উড়ে যায়।

দেখো ক্ষয়ে গেছে দুপুরের রোদ, এলো চুলে হেলানো নারকেল গাছটার ছায়ায় জমজ পাখি। এক পায়ের এক শালিখ উড়ে এসে খুঁটে খায় অন্ধকার। বেঞ্চিটার একপাশ খালি। তুমি এখন নীল রঙের জোছনা জড়িয়ে পরী, দূরে কোথাও। তুমি একটু এ দিকে এসো। এইখানে। আমার আঙুলগুলো ছুঁয়ে দেখো, কম্পমান।


আমাকে স্পর্শ কর, আমি আহত।

সে আমাকে খুব ডাকে, ডেকে ডেকে বলে- আমার নাম বলো। বলো দীর্ঘ ই। আমি কবেই ভুলে গেছি ভাষা। তাই চুপচাপ তার চোখ দেখি। তার চোখে দীর্ঘ অমাবশ্যা। তার কণ্ঠে নদীর গাঢ়ো মায়া স্রোত। একদিন নদীতে ভেসে গিয়েছিল একটা মরা হিরামন পাখি। সেই থেকে সুর ভুলে গেছি।


ভেতরে তার নাম জপে বোবা হয়ে থাকি।

চলে গেলেও পারি, কিন্তু কোথায় যাব? আমারতো একার একটা পাহাড় নাই, একটা নদীও নাই। আমার কেবল আমিই থেকেছি সারাজীবন। যদিও প্রতিবার রক্তের ভেতর জেগে থেকে দেখেছি গোপন; আর বার বার ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়েছি শহরের প্রাচীন দেয়াল। তবুও কোথায় যেন হারিয়ে যাওয়ার আগে কেউ আমাকে পত্র দিতো চুপচাপ, আমন্ত্রণ জানাতো তার ভেজা শহরের নিঙরে নেয়া আলোয়। এবং আমি নীরবে ভোরের দিকে মরে পড়ে থাকতাম.... কোথাও


জানি না

সারাটা সন্ধ্যা বিষণ্ণতায় একা রেললাইন
দ্বিধার আঙুলে স্পর্শ করি রাত
শিরা কেটে আত্মহত্যা করে গভীর ছায়া
আমি আর ছায়া মিলেমিশে একাকার


লাল লাল রক্ত জবা

চোখের শরবনে একটা দৃশ্যের নগর। সেখানে পুরাতত্ত্বের গভীর বিজ্ঞান। আলো ফেলে উজ্জ্বল উদ্যান। উড়ে এসে গান গায় হিরামন পাখি। পাখির পালকে উৎসবের জরি। এই শহরে বর্ষা নেমে এলে গান হয় চারুবন। নীল আলোয় রাত্রিধোয়া শরীরে ক্ষয়ে যায় পুরাতন।


কেবল বৃষ্টির উৎসবই নূতনকে স্বাগত জানানোর উৎসব হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে।

স্বপ্নে হারিয়ে ফেলেছি মায়ের নাকফুল। দাদুর নাক থেকে যেটি উত্তরাধিকারে মায়ের নাকে শোভা পেয়েছিল। ছোট্ট বড়ইয়ের ফুল। শেষ বিকেলে সবুজ পথটা সোনা রঙে ভাসে। আমি সেই সোনা বড়ইয়ের ফুল খুঁজে খুঁজে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আনি।


নাকফুল। জ্বল জ্বল করে জ্বলে সন্ধ্যার আকাশে। আমি একটাও কুড়াতে জানি না।

সম্পর্ক বয়ে আনা সন্ধ্যায় দু'জন জীবনে মিশে যাওয়া ট্রেন লাইন। পাশাপাশি অথচ আলাদা। শাদা দীর্ঘ চিকন দুটি সাপ অন্ধকার চুষে চলে। দূরে কোথাও ভ্রমে একাকার, বাস্তবে আমৃত্যু পৃথক।


সন্ধ্যার ট্রেনলাইন। শীতল বাতাস। দূরে সিগন্যাল।

যখন নিজের ভেতর নিজেই ডুবে ডুবে দিগভ্রান্ত তখন তোমার চিঠির আর প্রয়োজন হবে না ভেবে দু'টি জীর্ণ চোখে বুনে দেব স্বপ্ন, ওরা সুন্দর হয়ে উঠবে। আসলে এগুলোর কোন মানে নেই। যেমন অর্থ খুঁজে পাইনি আমি বেঁচে থাকার।


অথচ ফল পাকার দিনে একটা পাকা ফল হয়ে ঝুলে থাকতে চেয়েছি চিরকাল।

রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০১১

ধান ক্ষেতে আমি একটা কালো সাপ

বাবা প্রতিদিন সকালে অফিসে যান, সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরেন। ফেরার পথে বাজার করে আসেন কখনো কখনো। মা বাজার গুছাতে থাকেন। মাছ আনলে মার কাটতে সময় লাগে। বাবা তখন মাকে সাহায্য করেন। দু’জন কুটকুট করে কথা বলেন আর মাছ কাটেন। তারপর টিভি দেখেন। রাতের খাবার খান। তারপর বাবা মশারি টানান। মা কখনো মশারি খাটান না। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি কখনো বাবাকে দেখি না, ততক্ষণে অফিসে চলে গেছেন। ছুটির দিন হলে বাবা বাসায় থাকেন। বাবাকে রাগতে দেখি না, বিরক্ত হতে দেখি না। একদিন ছুটির দিনে সন্ধ্যায় বাবা বসে টিভি দেখখছিলেন, মা সেদিন গ্রামের বাড়িতে গেছেন। আমি বাবার পাশে বসলাম, বাবার চোখ টিভির দিকে। মুখ হাসি হাসি। যদিও বাবার মুখ সর্বদাই হাসি মাখানো থাকে। আমি বাবাকে বললাম, বাবা তুমি কি করে এভাবে বেঁচে থাকো, তোমাকে হিংসা হয়; আমার যে বেঁচে থাকতে ভালো লাগে না। বাবা তাঁর ডান হাতটা আমার পিঠের উপর আস্তে করে রাখলেন।
 _________________________________________________________________

বাবার একটা ট্রেনিং ছিলো, তখন বাবার বেতন বন্ধ ছিলো দশ মাস। আমি আর মা তখন গ্রামের বাড়ি ফিরে আসি। আমার স্কুলটা ছিলো অনেক দূরে। সকালে হাঁটতে হাঁটতে স্কুলে যেতাম। দুপুর হলেই আমার স্কুল ভালো লাগতো না। চনমনে রোদে আমি স্কুল পালাতাম। তারপর একা একা হাঁটতাম। দূরের কালো গারোপাহাড় আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকতো। শাদা শাদা মেঘেরা ভেড়া বানাতো, পাহাড় বানাতো, আলাদিনের দৈত্য বানাত। ধান ক্ষেতের আড়ালে চুপচাপ বসে থাকতাম একা একা। সবুজ ধানক্ষেতের গন্ধ ভালো লাগতো। একদিন ধান ক্ষেতে আমি একটা কালো সাপ দেখেছিলাম। আমার এতোটা পথ হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরতে কষ্ট লাগতো।

মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০১১

অতন্দ্রিতা আমার এমন ক্ষয়


মেঘে মেঘে চিঠি লিখে ক্লান্ত প্রহরে ঘুমের আয়োজন
একটা কালো পাখি ডানায় গেঁথে আনে মৃত্যুপোড়ামন
তার কণ্ঠ জড়িয়ে মরে যেতে ইচ্ছে করে খুব

স্মৃতির আড়াল থেকে আমাকে নষ্ট করে দিও প্রিয় চোখ, আমি সকলের ভেতর দৃশ্য বুনে দিতে চাই
তারা জানে না, তাদের করোটির ভেতর ঘুন, মগজে অসুখ, তারা ভুলে গেছে সমৃদ্ধরমন, তাদের চোখে কোন দৃশ্য নেই

পেয়ারাবনের পাশে মৃতের উদ্যান। সেখানে বসে আছে কেউ চিঠির প্রতীক্ষায়, জলের সন্ধানে নেমেছে দুপুরের কাক। আর মন্দাক্রান্তার নীলচোখের পরিশ্রুত দৃষ্টি লেগে আছে চোখের কোণে। এখন একটা কালো পাখি উড়তে গিয়ে ভেঙ্গে ফেলবে ডানা; তার পাশে জেগে থাকবে সারারাত মায়াবী আঙুল। তুমি ঘুম চেনোনা, অথচ তোমার শরীর জুড়ে অবসাদ।
সয়ে নিয়েছি রাত ...

মন্দাক্রান্তা, চোখের গহিন দেখো, কিছু নেই..... রক্তমাংশজল

প্রতিটি যুদ্ধেই নিজের লাশের উপর দাঁড়িয়ে দেখেছি, আমি পরাজিত বিধ্বস্ত সৈনিক

কার স্পর্শপুলকে অতন্দ্রিতা আমার এমন ক্ষয়?

বন্ধুর ছোরাটি বাম পাঁজরে ধারণ করে তার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে কোন রসিকতা নেই। আমার আঙুলগুলো কেঁপে কেঁপে অস্থির।

তার ঘুম মাখা চোখের দৃষ্টিতে কালো চিল, দূরে কোথাও গাঢ়ো সিম্ফনি

হ্যাঁ, আমাকে ধারণ করার মতো হৃদয় তোমার নেই, তুমি হৃদয়হীনতায় ভুগছো
১০
একটা পাখি ভুল করে ডেকে যাচ্ছে রাত
চোখের কাছে এসেই ফুরিয়ে যাচ্ছে দৃশ্য
জেগে উঠছে ক্রমশ মৃত্যুগামীমন
১১
প্রকৃত অর্থেই আমরা কেউ ভালো থাকতে চাইনি, কিন্তু বিদায় কালে পরস্পর পরস্পরকে ভালো থাকতে বললাম
১২
নিজে নিজে পুড়ে মরি নিজের অনলে
তুমি একটা সুর তুলে বাঁশি বাজাও
বাঁশি করুণ তার ক্ষতের যাতনায়

রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০১১

বিষলতিকার স্পর্শে গাঢ়োনীল হাহাকার


তার অনবদ্য শরীর জুড়ে আমার চুপচাপ স্পর্শের বসবাস। গুছিয়ে রেখেছি ফিরে যাওয়ার ঝোলা। কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়েই প্রস্থান। তার শেষ চুমুতে ঠোঁট সিক্ত করে চলে যাওয়াও হয়তো সময়ের। কিন্তু কোথাও আবদ্ধ সামাজিক মন। শরীরের চেয়ে ঘন ও পার্থিব সময় আরো ঘন হয়ে ঘিরে আসে। চোখ জুড়ে ভাসিয়ে দেয় সহস্র দৃশ্য। আমি তার ঠোঁটের পাশে জেগে থাকা কাশবন। আড়ালে আখের খেত, বাঁশবন আর একটা দীঘল পথ কোন এক তালপুকুরের পাশে পড়ে থাকে। সে তখন ঘুমের ওষুধে নিষিক্ত শরীর। খুব কাছে জড়ো হওয়া রোদ। বাতাসে মাখা সুগন্ধী পেয়ে ঘুমশরীরে জেগে ওঠে সূক্ষ্মতীক্ষ্মলোম। সোনালি শরীর জুড়ে কাশবন স্পর্শে স্পর্শে খুন। তার কালো চুলের পাশে নদী। কতবার সে নদীতে ডুবে মরি!
একটা শহর জুড়ে বৃষ্টি নেমে আসে তার চলে যাওয়ার পথে চোখ ফিরাইনি বলে। কারো নথে ঝুলে থাকা স্বপ্ন স্পর্শপুলকে খুন হতে থাকে। শহরের পাশে নদী রুগ্ন আর গ্রামের পাশে বেঁচে থাকা বাতাস কারো স্তনে বিষলতিকার স্পর্শে গাঢ়োনীল হাহাকার। বৃষ্টিতে চাঁদ ধুয়ে যায়, বৃষ্টিতে জেগে ওঠে চর, সিক্ত চরাচর।
মধুবনে বুনে দিচ্ছি ধুপ, রোদচশমার আড়ালে ধারালো চোখ। প্রতিটি বাঁকেই গভীর দৃশ্য। একটা নীল সাইকেল আর পথের মাটিতে সন্ধি। ক্রমশ: নেমে এলে সন্ধ্যা কোন এক অগভীর জলাশয়ে ফেলে আসা পথটুকুর স্মৃতি জিইয়ে রাখি। বাড়ি ফিরে এসে দেখি মায়ের উনুনে শাদা ভাতের ফেনা। বাবার হাতের ঠোঙ্গায় শুকনো সন্দেশ। বাবা গভীর কন্ঠে কাছে ডেকে হাতে তুলে দিয়ে বলেন- 'খাও'। আমার চোখ পড়ে থাকে মধুবনে, সেখানে বুনে এসেছি ঝাউগাছ। রোদচশমা সহ ভুলে ফেলে এসেছি চোখ। বাবার কাছে উবু হয়ে বসি। মা পাশে এসে বসে হাত রাখেন শরীরে। বলেন, ভাত খা। আমি আর বাবা ভাতে আর জলে পাশপাশি থাকি। বাবা বলেন, ওপাশে বারান্দায় ঝুলে পড়েছে তোমার শৈশব, তুমি ঘুমাও। মা আঁচলে মুছে দিতে থাকেন ক্লান্তি।
তাঁদের বলতে সাহস করিনি, আমি আত্মহত্যা করে ঘরে ফিরেছি।

শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১১

এই বৃষ্টি জমিয়ে রেখেছি কোথাও

চোখের গহিনে কোথাও টানিয়ে রেখেছি দৃশ্যগুলো। একেকটা টেনে সামনে নিয়ে আসি, রক্তের ভেতর চুপচাপ আলোড়ন। লোমশ অন্ধকারে তলিয়ে যেতে যেতে শুনি তার ডাক, বহুদূর থেকে।

আমি সাড়া দেই-
: হুমম
: কি করেন?
: কিছু না।
: আমি এই মাত্র একটা গল্প পড়লাম। এত্তো জোসস একটা গল্প....
কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করি। লালন করি ভেতরের শুন্যতার আলোড়ন....
তিনি বলেন-
: আমি ভাবছি..... আমি কি ভাবছি জানেন?
: না
: আপনি একটা অভদ্র। আপনিতো জিজ্ঞেস করবেন যে, কি ভাবছেন?
আমি তখন একটা মেঘ আঁকি। তারপর মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়ি লজ্জায়। এদিকে ঝুঁকে পড়ে চাঁদ। অসভ্য রোদের আলোয় পোড়া শরীরের ক্ষতও শিল্প হয়ে ওঠে। আমি সে দৃশ্য চোখে টানিয়ে রাখি। আর তার কণ্ঠ ভেঙ্গে ভেঙ্গে পরিশ্রুত নরম জোসনা। আমি প্রতিটি উচ্চারণে ঘুম ডেকে আনি। তারপর কোথাও বৃষ্টি নামে। আর আমি ঘুমে তলিয়ে যেতে যেতে শরীরে জড়িয়ে নেই মায়ের পুরনো শাড়ি দিয়ে তৈরি নরোম কাঁথাটা। ঘুম থেকে জেগে দেখি তার সবুজ শরীরে জমা শিশির।

মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১১

ইতিন

বাদর ছেলেটা সকাল থেকে একবারও খাবার দেয়নি। রিচুকে পটকু এক দানা খাবার বের করে দিয়েছে মুখ থেকে। পটকু একটা রাক্ষস আর ধুরন্দর। খাবার দেয়ার সাথে সাথে দানা দানা খাবার মুখের মাঝে পুরে ফেলে। দুএকটা দানা মুখের মাঝে জমিয়ে রাখে। রিচুকে সে খাবার দিয়ে দিয়ে তার বন্ধু বানিয়ে নিয়েছে। রিচুটাও কী হ্যাঙলারে বাবা! পটকু, রিচু এ্যাকুরিয়ামের একপাশে বসে কি যেন পুনুর পুনুর করছে। হ্যাবলা কালোটা ঝিমিয়ে আছে। আমি একা একা খাবারের জন্য বসে আছি। উফ ক্ষুধায় কিচ্ছু ভালো লাগছে না।ইতিন যখন এমনটি ভাবছিলো। তখনই ছেলেটা এ্যাকুরিয়ামের দিকে আসলো। পটকু আর রিচু তখন নিজেদের আলাপে মশগুল। ইতিন ভাবলো ছেলেটা খাবার দিতে এসেছে। সে সাঁতরিয়ে উপরের দিকে উঠে এলো। আর উপরে উঠতেই ছেলেটা দুই হাত দিয়ে খপ করে তাকে ধরে উপরে নিয়ে আসলো। উরে বাবা!বলে ইতিন একটা চিকার করতে পারলো। সে চিকার রিচু শুনলো কি না কে জানে!
তখন খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। ছেলেটা ইতিনকে ধরে এনে কাদা জলে ছেড়ে দিলো। জল পেয়ে শ্বাস নিলো ইতিন। কিন্তু এই নোংরা জলে তার ঘেন্না করতে লাগলো। সে পুরো বিষয়টায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে। সামনে একটুকরা খাবার ছিলো, নোংরা খাবার। সেটাই সে খেয়ে নিলো গপ করে। ছেলেটা তাকে তাড়া করছিলো সাঁতার কাটার জন্য। সে কিছুক্ষণ সাঁতার কাটালো। হঠা একটা কালো মাছের বাচ্চা দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বললো, এই যে, আসো আমার সাথে হুদোল ছুঁচোটা তোমাকে মেরে ফেলবে, পালাও, গিচুং গিচুং। ইতিন এই বিষয়টাও বুঝলো না আর ‌‘গিচুং গিচুংও বুঝলো না।তবু জীবনের মায়ায় কালো মাছের বাচ্চাটার পেছনে সাঁতরাতে লাগলো। কালো মাছের বাচ্চাটা খুব দ্রুত সাঁতরায়। আর সাঁতরাতে সাঁতরাতে গ্যা, গুচ করে বাঁক নেয়। ইতিন কিছুই লক্ষ্য না করে অনেকক্ষণ কালো মাছের বাচ্চার পেছন পেছন সাঁতরিয়ে এলো। একসময় কালো মাছের বাচ্চাটা থেমে গেলো। ইতিনও হাঁফাতে হাঁফাতে থামলো কিংবা থেমে হাঁফাতে লাগলো। তুমি ওই হুদোলটার হাতে পড়লে কি করে?’ চোখ নাচিয়ে কালো মাছের বাচ্চা জানতে চায়। ইতিন কিছু না বলে জানতে চায়, তোমার নাম কি?
কালো মাছের বাচ্চাটা একটা ঘূর্ণি কেটে লেজটাকে দুএকটা মোচড় দিয়ে গলাটাকে গম্ভির করে বলে, ‘আমার নাম রুফি টাকি। তোমার নাম কি?’
ইতিন।
এটা আবার কেমন নামরে বাবা! ভুশশশশ
ইতিন হেসে ফেললো- কেন? নামটা সুন্দর না?
হুমমম, সুন্দর, কিন্তু তোমার গায়ের রঙ এমন হলো কি করে? এতো সোনালি! তোমার মতো এমন গায়ের রঙ আগে কারো দেখিনি।
ও।
ইতিনের হঠা মন খারাপ হলো। রিচু, পটকু আর কালো ভ্যাবলাটার জন্য তার মনটা কেমন করতে থাকলো। আহারে রিচু, পটকু, ভ্যাবলা! তাদের সাথে আর জীবনে দেখা হবে কি না কে জানে!
গ্যাচুং, গ্যাচুং তুমি এতো কি ভাবো? জানতে চায় রুফি।
ইতিন বলে, কিছু না।
চলো আমার সাথেবলেই রুফি চলতে শুরু করে। ইতিন তার পেছন পেছন চলে। এটা একটা নর্দমা। নোংরা পানিতে গা ঘিন ঘিন করছিলো ইতিনের। কিন্তু একটু সময়েই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় পানির খুব স্রোত। স্রোত কেটে কেটে রিফুর পেছনে পেছনে এগিয়ে চলে ইতিন। পথে চলতে চলতে একটা পুঁটি মাছের সাথে দেখা হয়। রিফু তাকে মাথা দিয়ে ঢুঁশ দেয়। ঢুঁশ খেয়ে পুঁটিটা হাসতে হাসতে শেষ। ইতিনকে দেখে বাঁকা চোখে তাকায়। রিফুর কাছে জানতে চায়, এটা কে রে? রিফু বলে, ও ইতিন, আমার বন্ধু। নতুন এসেছে। পুঁটিটা এসে ইতিনের গা শুঁকে। তারপর বলে, বেশ সুন্দর, বেশ সুন্দর। তারপর হেঁড়ে গলায় গান ধরে আমার ভিন দেশী তারা.... । আর হাসতে হাসতে চলে যেতে থাকে। ও খুব ভালোবললো রিফু। ইতিন উদাস কন্ঠে বলে, ‘'কিছু দিন আগে সে তার বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলছে। এখন সে একা একা থাকে।'
ইতিনের মনটাও খারাপ হয়ে যায়, তার মনে হয়, সেও তো একা।
কিছুটা পথ যেতেই রিফুর মতো দেখতে তিনটা মাছ এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়। তাদের একটা রিফুকে জিজ্ঞেস করে, ওই রিপ্যুা, তোর লগে এইডা কেডারে?
আমার বন্ধু ইতিন।
ওরা এসে ইতিনের চারপাশে ঘোরপাক খায়। ইতিনের ভালো লাগে না। রিফু বলে, চলো ইতিন।
মাছ তিনটা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। রিফু তাদের সাথে আর কথা বলে না। তারাও রিফুর সাথে কথা না বলে গুম মেরে থাকে।
(
২রা জুন, ২০১১)

ইতিনকে নিয়ে রিফু নর্দমার একটা ফোকরে ঢুকে পড়ে। এসো, এটা আমাদের বাসা।বলে নিয়ে যায় ভেতরে। ইতিন খুব বিব্রত বোধ করে। এ রকম পরিস্থিতির স্বীকার সে জীবনেও হয়নি। ভাবনার অতীত একটা কাণ্ড ঘটে গেলো তার জীবনে। রিফুকে দেখে ছুটে আসে দুইজন, একটি ছেলে আর একটি মেয়ে টাকি মাছ। দুজনই রিফুর চেয়ে বয়সে ছোট। ইতিনকে দেখে তারাও বিস্মিত হয়। রিফু পরিচয় করিয়ে দেয় ইতিনের সাথে তার ছোট ভাই জিফুও বোন সাইফুকে। কোণের অন্ধকার থেকে এক বৃদ্ধ বেরিয়ে আসেন, ‘রিফু, তুমি কি স্কুল থেকে ফিরলে?... আরে .. এ কে?’ রিফু ইতিনকে তার দাদুর সাথেও পরিচয় করিয়ে দিলো। দাদুকে সব খুলে বললো। দাদুর কপালে চিন্তার রেখা দেখা গেলো। তাহলে বলতে চাচ্ছো, ইতিনের কেউ নেই?’
হ্যাঁ, তাই।বললো রিফু। সে তবে আমাদের এখানেই থাকবে?’ দাদু জানতে চায়লো। রিফু ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। বাবাহীন চার জনের সংসার মা একা টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখানে ইতিনের থাকাটা বাড়তি ঝামেলাই। রিফু ইতিনের সামনে লজ্জায় মাথা নত করে রাখলো। ইতিনও বিব্রত অবস্থায় কি বলবে বা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিলো না। দাদু তখন হা হা করে হেসে বললেন, ইতিন আমাদের এখানেই থাকবে। ইতিন আমাদের পরিবারেরই একজন। জিফু আর সাইফু লাফিয়ে উঠলো আনন্দে। কিন্তু রিফু, ইতিন আর দাদুর ভেতরে ভেতরে ঠিকই একটা অস্বস্তি গুম হয়ে থাকলো। অনেকটা সময় তারা সহজ হতে পারলো না।
আরো কিছুক্ষণ পর রিফুর মা বাসায় ফিরলো। ইতিন একটা কোণে চুপটি করে বসেছিলো। রিফু তার বাড়ির কাজ করছিলো। জিফু আর সাইফু কি যেন খেলছিলো। আর দাদু একটা কাগজে কি যেন আঁকি-বুকি করছিলো। রিফুর মা খুব মোলায়েম কণ্ঠে তার সন্তানদের নাম ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকলেন। প্রথমে ইতিনকে তিনি খেয়াল করেননি। কারণ ইতিন অন্ধকার কোণটায় বসেছিলো। জিফু আর সাইফু দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো। তাদের মা তাদের আদর করলেন। রিফু চুপ করে বাড়ির কাজের খাতায় অঙ্ক করছিলো। তাকে চুপ দেখে মা তার দিকে এগিয়ে এলেন। কিরে স্কুলে মার খেয়েছিস? এতো চুপচাপ কেনো?’ তখনই চোখে পড়লো ইতিনকে। বাহ্ কি সুন্দর! কে গো তুমি?’ জিজ্ঞেস করলো ইতিনকে। ইতিন মাথা নিচু করে জবাব দিলো আমি ইতিনভারী মিস্টি নামতোমা এগিয়ে গেলেন ইতিনের দিকে পাখনা দিয়ে আদর করে দিলেন। তখন দাদু তার ভাঙ্গা চশমাটা খুলে মুছতে মুছতে বললেন, বৌমা ইতিনের মতো আমার এক বন্ধু ছিলো বুঝলে, তার নাম ছিলো রৈরাঙ বেলে। ঠিক ইতিনের মতো নয় কিন্তু সোনালি দাগ কাটা। তো বিষয়টা হচ্ছে কি জানো? ....’ দাদু মাকে ইতিনের বিষয়টা সময় নিয়ে গুছিয়ে বললেন। ইতিন ও রাফু এবং দাদু মনে করেছিলো মা রাগ করবেন এবং ইতিনকে এখানে থাকতে দিবেন না। কিন্তু মা কিছুই বললেন না। সব শুনে ইতিনকে কাছে টানলেন, আদর করে দিলেন। বললেন, ‘তুমি আমার আরেকটা ছেলে।ইতিনকে কেউ এভাবে আদর করেনি আগে। কি এক অদ্ভুত কারণে তার চোখ ভেঙ্গে কান্না আসতে লাগলো। রিফু মার কথা শুনে দৌড়ে এসে ইতিনকে জড়িয়ে ধরলো, তা দেখে জিফু আর সাইফুও এসে ইতিনকে জড়িয়ে ধরলো।
রাতে খাওয়া-দাওয়ার সময় ইতিন কিছুই খেতে পারলো না। সে তার সারা শরীরে ব্যথা অনুভব করতে থাকলো। দাদু বললেন আবহাওয়ার পরিবর্তনে ইতিনের এই ধরণের সমস্যা হচ্ছে। ঠিক করা হলো সকালে কাকিলা ডাক্তারকে ডেকে আনা হবে। ইতিন প্রচণ্ড জ্বর কিন্তু অদ্ভুত আনন্দ নিয়ে রিফু, জিফু আর সাইফুর সাথে ঘুমুতে গেলো।
সকালে ঘুম থেকে জেগে কাঁথা গায়ে দিয়ে বসে থাকলো ইতিন। মা ঘরের কাজগুলো সারছিলেন। জিফু আর সাইফু ঘুম ভাঙ্গা অবসন্নতা নিয়ে চুপচাপ বসে ছিলো। দাদু দীর্ঘ সময় ধরে তার দাঁতগুলো পরিষ্কার করে শাদা চুলগুলো আঁচড়ালেন। তখনি রিফু কাকিলা ডাক্তারকে নিয়ে হাজির হলো। ইতিন এ রকম ভয়াবহ আকারের মাছ আগে দেখেনি। সামনে অনেকগুলো দাঁত। তবে বুড়ো হয়ে যাওয়ায় কিছু দাঁত পড়ে গেছে। কথা স্পষ্ট উচ্চারিত হয়না, কিহে, টাক্কু তোমাদের আবার কার অসুখ হলো? দাদুর বন্ধু কাকিলা ডাক্তার। দাদুর টাক নেই। তবু টাকি মাছের জন্য তাকে টাক্কু বলে ডাকেন। দাদু ইতিনকে দেখিয়ে দিলেন আমার নাতি, দেখোতো কি হইলো?’ অনেকক্ষণ তিনি ইতিনকে দেখলেন। জিহ্বা, চোখ, নারী নক্ষত্র। তারপর বললেন, ঠিক হয়ে যাবে। এরপর ইতিনের একটা পাখনায় একটা দাঁতদিয়ে কামড়ে দিলেন। ইতিনের খুব ঘুম পেতে থাকলো। কিন্তু সে ঘুমালো না। ঘুম ঘুম আবেশে থেকে সে শুনতে পেলা ছাড়া ছাড়া কিছু কথা- নদীতে যাওয়ার ম্যাপটা আমার ঠিক আছেহ্যাঁ, তারাইতো আন্দোলন করলো তত্বাবধায়ক সরকারের জন্য।’ ‘সংসদে না গিয়ে চিল্লা-পাল্লা আর হরতাল করে কি লাভ, ওরা বসে সমস্যা সমাধান করুক। এরপর একটা গভীর ঘুমে ইতিন তলিয়ে গেলো।
(
২৯ জুন, ২০১১)

আশা রাখি এই গল্পটা এই পোস্টেই বিবর্ধিত হবে ক্রমে .....

রবিবার, ২৬ জুন, ২০১১

বন্ধু, ওখানে স্পর্শ করো না, ওখানে ক্ষত জমে আছে


একবার দেখো আমি ‘বন্ধু’ শব্দটাকে কতোটা আদর করে জড়িয়ে রেখেছি। ওখানে স্পর্শ করো না, ওখানে ক্ষত জমে আছে। একবার ভাবতো আমি কি ছিন্ন করেছি রোদ? আমি কি লঙ্ঘন করেছি সীমার আঁধার? আমি বরাবর আমার সম্পর্কে সচেতন। বন্ধু, আমাকে ছেড়ে যাওয়া জোনাকিদের আমি চলে যেতে দেই তাদের ভালোবাসি বলে। এই আঁধারটুকু আমার থাক।
দেখো, তোমাকে সাজিয়ে রেখেছি, ওখানে স্পর্শ পড়েনি ভুল। তোমাকে কামড়ে খায়নি ভেতরের প্রেত। আমি পারি, আমাকে এভাবেই গুছিয়ে রেখেছি। আমি ছাড়া কেউ বাজাতে পারবে না আমার এস্রাজ। আমার এস্রাজে আমি ভুল সুর তুলি না।
তোমার কাছে আমার অনেক গানের দেনা। তোমার কাছে আমি সুরের ঋণে বন্দী। তোমার কণ্ঠে আমার অলকধানের ফসল। তোমার চোখে বুনে দিয়েছি কৃষ্ণপ্রহরের ঘুম। আমাকে ক্ষমা করো, বন্ধুত্বের চেয়ে আর বড়ো কোন ঋণ নেই।
তুমিও চাচ্ছিলে, আমিও ছিঁড়ে দিলাম প্রণয় বকুল। আঙুলে জড়াবো না আঙুলের শোক। ভালো থেকো, ভালো থেকো।
“একজন একা একা গুছিয়ে নিচ্ছে মৃত্যু ও মদের দুপুর”
তুমি জানো দুপুরের রোদ অসুখ আমার। তুমি জানো ভেতরে পোষা অসুখে জীর্ণ আমার চোখের পাতা। দ্রাক্ষারসে ধুয়ে দেওয়া তোমার আলিঙ্গন পূর্ণ হলো। দুপুরের রোদে বিহ্বল বাতাসে বাঁশপাতা কাঁপলে ভুলে যেও পথের ধুলোয় আমার পায়ের চিহ্ন জমা। আমি একা থাকি, একাই বাঁচি। আমি আমাকে পাল্টাবো না। তুমি যাতে বিরক্ত না হও তার জন্য একটা দেয়াল টেনে দিয়েছি। এটাকে কান্না ভেবো না। আমি কখনো কখনো প্রচণ্ড নিষ্ঠুর। নিষ্ঠুর সময়ে কেউ কখনো কাঁদেনা।

শনিবার, ২৫ জুন, ২০১১

আঙুলে লিখি আঙুলের ক্ষয়


ভুলে গেছি তার শরীরের ঘ্রাণ – আঙুলের ভাঁজ, বিবর্ণ চর্তুমাত্রিক স্বপ্নের ভেতর ছুটে চলা বিভ্রান্ত পথিক। সামনে দাঁড়িয়ে সব প্রেতের মিছিল। একটা দীর্ঘ ঘুমের প্রত্যাশায় চোখের কোণে রাত্রি টানিয়ে রাখি। আজও আমার মরণ হলো না ভিষণ; তার চোখের তারায় আমার প্রতিবিম্ব নেই – এই সত্য অনুধাবনের পর কেউ কেউ আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয় – আমিওতো আমার ভেতর একা একা থাকি- শব্দের প্রতিধ্বনির সূত্র ভুলে তার কানের কাছে শব্দ করে শব্দের প্রতিফলন প্রত্যাশা করি। আমি তাকে একটা চিঠি লিখতে চাই -  খুব দীর্ঘ এক চিঠি। কিন্তু সে আমার কেউ না, কেউ না। তার চোখে আমি নেই, আমার চোখে সে নেই। আমাদের ভেতর আমাদের মৃত্যু নেই। জানেন, আজো আমার জ্বর। আমার পাশে আমার মা নেই। কেউ নেই। আমি জ্বর নিয়ে কি যেন লিখছি। জ্বর হলে আগে আমি দুঃস্বপ্ন দেখতাম। একদিন জ্বরের দুঃস্বপ্নে আমার মা মারা গেলেন, আমি আর বাবা তাঁকে কবর দিয়ে এলাম-আর কাঁদতে কাঁদতে জেগে উঠলাম। জেগে দেখি আমার জ্বরের কপালে মায়ের শীতল আঙুল। আমি মাকে খুব ভালোবাসি, খুব – খুব – খুব। বাবাকেও। তবে মাকে কেন যেন একটু বেশি ভালোবাসি নিজের অজান্তে। কিন্তু বাবা আমার বন্ধু। মাকে ভয় পাই, মা বকেন এবং মারেন। বাবা মারেন না, বকেনও না। একদিন বাবা মেরেছিলেন, তারপর আমার প্রচণ্ড জ্বর হলো। বাবা তখন আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন। এটা আমি আর বাবা জানি কেবল। ছোটকালে আমি একবার আত্মহত্যা করবো ভেবেছিলাম- কারণ বেঁচে থাকতে ভালো লাগতো না, কিন্তু মরে যেতেও ভালো লাগতো না। আসলে বেঁচে থাকা এবং মরে যাওয়া দুটোই বিরক্তিকর। ভেতরে লালন করি রক্তমাংশমন। ভেতরে দহন করি আঁধার আপন। আঙুলে স্পর্শ করি আঙুল আমার। এ কথা সত্য আমি একবার প্রেমে পড়েছিলাম। আসলে প্রেমে মানুষ পড়ে অর্থা মানুষের পতন হয়। প্রেমে পড়ার পর ভাবলাম বড়ো হয়ে গেছি আমি এখন সিগারেট খেতে পারি। কিন্তু সিগারেটে খুব র্দুগন্ধ এবং বিস্বাদ। তথাপি ভাবলাম বড়ো হয়ে গেলে সিগারেট খাওয়া যায় কেননা সিগারেট শব্দটা আমার পছন্দ এবং ধূয়া ছাড়াটাও। রাতে আমার ঘরের দরজা বন্ধ করে সিগারেট খাচ্ছিলাম। মা এসে দরজা ধাক্কালে দরজা খুলে দিলে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, সিগারেট খাচ্ছিস? তারপর আমাকে আর কিছুই না বলে দেয়ালে নিজের মাথা ঠুকতে থাকলেন। বাব এসেও আমাকে কিছু বললেন না। মাকে নিয়ে গেলেন। আমি একা একা বসে থাকলাম সারারাত জেগে থেকে। আমার আর সিগারেট খাওয়া হলো না। আমি এখন আঙুলগুলোকে সিগারেট ভেবে টেনে টেনে ধূয়া ছাড়ি। মাথার ভেতর ঘুম আর হরিতের ঘ্রাণ। আর কোন চিন্তা নেই। হারিয়ে যাওয়া যষ্টিমধুফুলের সংসার। কতগুলো দৃশ্য চোখের ভেতর। ফোন আসছে, কে যেন আমাকে ডাকে, হ্যালো, হ্যালো। একটা নাম্বার থেকে আমার খুব ফোন আসতো। ফোন ধরলে ওপাশ থেকে কেউ কথা বলতো না। খুব জানতে ইচ্ছে হলো ওপাশে কার নিঃশ্বাস পোড়ে। একটা নতুন সিম কিনে আমি ঐ নাম্বারে ফোন দিয়েছিলাম। একটা মেয়ে কণ্ঠ হ্যালো হ্যালো করলো, আমি তখন তার মতো চুপ করে ছিলাম। আরো একবার ফোন করলে সে আবারো হ্যালো হ্যালো বলে আর আমি চুপ করে থাকি। তারপর সে একটা গাল দিয়ে ফোন রেখে দিলো। আমি স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলাম। একটা সবুজ চুপচাপ গিলে খায় মদ। একটা হলুদ ঝেরে ফেলে জীবনের রঙ। বহুদূরে পাহাড় আছে, গারোপাহাড়। আরো দূরে শাদা মেঘের পাহাড়। স্কুল থেকে ফেরার পথে দুইটা পাহাড়ই আমাকে টানতো। গাছের ছায়ায় শুয়ে শুয়ে মেঘ দিয়ে পুতুল বানাতাম। যুদ্ধ খেলতাম। আর গারোপাহাড়ের দিকে তাকিয়ে ভাবতাম একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে পাহাড়ে চলে যাবো। আমার আঙুলে ব্যথা। তুমি কি বুঝতে পারো চিঠি পড়ে আঙুলের ক্ষয়?

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০১১

কেউ আসে এবং যেতে হয়

হ্যাঁ, তার নাম ইমতিয়াজ আহমেদ। বয়স সত্তর এর কাছাকাছি। তিনি প্রতিদিন বিকালে বারান্দায় শুভ্র পোশাক পড়ে, সুগন্ধি মেখে, চকচকে কালো চামড়ার সেন্ডেল দুটি পায়ে দিয়ে, চলাচলের সুবিধার জন্য কেনা কালো লাঠিটি পাশে নিয়ে কারো জন্য অপেক্ষা করেন। একজন কেউ এসে তাকে কোথাও নিয়ে যাবে। তিনি তার প্রতীক্ষায় প্রতিদিন বসে থাকেন সারাটা বিকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ।

একমাত্র মেয়েটাকে বিয়ে দেয়ার পর তাদের আর কোন কাজই ছিলো না। হ্যাঁ, আমি ইমতিয়াজ সাহেব আর উনার স্ত্রীর কথা বলছি। চমৎকার এক বৃদ্ধা ছিলেন। হাসি-খুশি। এক কালে খুব সুন্দরী ছিলেন বেশ বোঝা যেত দেখে। শাদা চুল, শাদা শাড়ি আর ফর্সা মুখ খানি। মেয়েটাকে বিয়ে দেয়ার পর হঠাৎ তাদের ভেতর এক ধরণের অবসরের অনুভূতি চলে আসলো। আর কোন দায়িত্ব নেই। মফস্বল শহরের দুইতলার বাড়িটার দু'তলায় তারা দুজনের অবসর অবসর জীবন যাপন। তাও কেটে যাচ্ছিলো। মাঝে মাঝে মেয়েটা বেড়াতে আসতো। এবং তারা মেয়েটার বেড়ানো আসার প্রতীক্ষায় প্রতীক্ষায় বেঁচে থাকতো। কিন্তু মেয়েটা যখন তার স্বামীর সাথে দীর্ঘ ভ্রমনে দেশের বাইরে চলে গেলো তখন বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা দীর্ঘ প্রতীক্ষায় বসবাস করছিলেন। বৃদ্ধা দীর্ঘ প্রতীক্ষার পথে একদিন অনাকাঙ্খিতভাবে ইমতিয়াজ সাহেবকে আরো নিঃসঙ্গ করে চলে গেলেন। তারপর থেকেই ইমতিয়াজ সাহেব বিকাল বেলায় কারো আসার প্রতীক্ষায় বসে থাকেন। কারো আসার কথা ছিলো, কেউ আসবে।

এমনি এক বিকেল বেলায় যখন ইমতিয়াজ সাহেব অপেক্ষায় ছিলেন। কেউ আসবে এবং কেউ তাকে নিয়ে কোথাও যাবে। তখন তার বাসার মূল দরজায় কেউ নক করে। তিনি দরজা খুলে দিয়ে দেখেন ৫/৬ বছরের এক দেবশিশু দাঁড়িয়ে। তার সুন্দর হাস্যজ্জ্বোল মুখ। তিনি বিস্মিত হলেন। এই তবে! 'তোমার দরজা খুলতে এতক্ষন লাগে? ধুর! সরো, ভেতরে যাই।' ইমতিয়াজ সাহেব সরে দাঁড়ালেন। শিশুটি সারা ঘর কি যেন খুঁজে আসলো। 'এই, তোমার বাসায় আর কেউ নেই?' ইমতিয়াজ সাহেব কেন যেন ঘামছিলেন। পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, না।
হুমম, তুমি কোথায় যাচ্ছো এতো সাজুগুজু করে?
না, কোথাও যাচ্ছি না।
কেন? চলো ঘুরে আসি। আমি তোমাদের নিচ তলার। আমি এখন থেকে এখানেই থাকবো স্কুলে ভর্তি হবো। চলো, চলো আমরা ঘুরে আসি।
তোমার নাম কি, খোকা?
আমার নাম দিতুল। তোমার নাম কি?
ইমতিয়াজ আহমেদ।
ও। তুমি কি বেড়াতে যাবে না?
যাবো। দাঁড়াও আসছি।

ঠিক ধরেছেন। ইমতিয়াজ সাহেব দিতুলকে নিয়ে ব্যস্ত থাকলেন। প্রতিদিন বিকালেই দিতুল চলে আসতো তার কাছে। তিনি তাকে নিয়ে খেলেন, বেড়াতে যান, ছবি আঁকা শেখেন, লেখাপড়া শেখেন।
বলতো ইংরেজি লেটার কয়টি?
ইমতিয়াজ সাহেব বলেন, ২৬টি।
আরে না ২৮ টি।
ইমতিয়াজ সাহেব বিভ্রান্ত হন। ২৬ টি না ২৮ টি? তিনি এ, বি, সি গুণতে থাকেন।
আরে, 'দ' আর 'ত' এর জন্য কোন লেটার রাখেনি। তাই ওদের জন্য আমি দুইটা লেটার বানিয়ে দিয়েছি। একটা 'দি' আর একটা 'তি'। 'দি' থাকবে 'ডি' এর পরে আর 'তি' থাকবে 'টি' এর পরে, বুঝছো? তাহলে 'দিতুল' লিখতে 'ডিটুল' লিখতে হবে না।

এভাবেই দিতুলকে নিয়ে ঘন্টা দুইয়েক সময় কাটানোর অপেক্ষায় থেকে থেকে তিনি একটি একটি করে দিন বেঁচে থাকছিলেন। একদিন বিকেল বেলায় দরজায় নক করলে তিনি দিতুল ভেবে দরজা খুলে দেখেন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি নিজেই।
'কি ব্যাপার! তুমি তৈরি হওনি?' কালো পোশাক পড়া এবং কালোচশমায় চোখ ঢাকা ইমতিয়াজ সাহেব আমাদের ইমতিয়াজ সাহেবকে জিজ্ঞেস করেন।
আমাদের ইমতিয়াজ সাহেব ঘামতে থাকেন।
'আচ্ছা, কাল তৈরি থেকো।' বলে চলে যান কালো ইমতিয়াজ সাহেব। তারপর দিতুল আসে। তিনি চিন্তিত থেকেই দিতুল এর সাথে বেড়াতে যান। দিতুলকে বলেন, তুমি আগামীকাল এসো না। আমি বাসায় থাকবো না।
'তুমি কোথায় যাবে?' দিতুল জানতে চায়।
ইমতিয়াজ সাহেব চুপ করে থাকেন।

পরদিন বিকালে ইমতিয়াজ সাহেব একটা ধারালো ছুরি হাতে দরজার সামনে বসে থাকেন। তিনি কোথাও যেতে চান না। একসময় দরজায় নক হয়। তিনি প্রচণ্ড ঘামছিলেন। তার চোখ দুটি লাল। তিনি ধারালো ছুরিটা শক্ত করে ধরে কাঁপতে কাঁপতে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন।  

মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১১

তার গ্রীবায় লেগে থাকে বিষণ্ণ সুন্দর

পালকের ফাঁকে ক্ষতের দঙ্গল
রক্তের আভায় ছড়িয়ে পড়ছে
ক্রোধান্ধ চোখ, চিবুকের
কাছে থরো থরো চিকার
ভাষাহীন অথচ কলহে
পুড়ে যাচ্ছে পুরোটা মানচিত্র;
আমি এর অনুবাদ জানি না।

প্রতিটি পতন পুলক আনে প্রেমের, কোন কোন পতনে মৃত্যু; মৃত্যু ও প্রেম সমগোত্রীয়।
সে প্রথম চোখে চোখ রাখলে চোখের ভেতর চাষ হয় স্বপ্নের
তার গ্রীবায় লেগে থাকে বিষণ্ণ সুন্দর, তার ঠোঁটের পাশে গন্ধমাখা হরিতের।
প্রথমবার চুম্বনে আমার পতন ঘটেছিলো, আমি তাকে মৃত্যু বলে জানি।

কবরস্থানের উল্টোদিকের পাড়াটায় এক চাঘরে বসে আছি। অদূরেই মূর্তিকারিগর নিপুন হাতে সুঢৌল করে দিচ্ছে প্রতিমার স্তন। তারপাশেই এক রমনী উনুনে ঢেলে দিচ্ছে রান্নার উপকরণ। ঘামে ভেজা তার শ্যামলা শরীর, লাল ব্লাউজ। জ্বল জ্বল করছে সিঁথির সিদূর, পানরসে লাল ঠোঁট। এক অন্ধ গায়েন সারিন্দায় তুলে আনছে সুর। সারিন্দার কাঠে বসে আছে পোষা কালো পাখি। গায়েনের নরোম মুখে অদ্ভুত স্মিত হাসি। একটি নগ্ন মেয়েশিশু মাটিতে বসে বসে খেলছে আপন মনে। একটা কাক মৃতপ্রাণীর নারিভুরী ছিঁড়ছে। একটা তরুণী জল ঢালছে আষাঢ়ের বৃষ্টিহীন তাপে পোড়া শরীরে। চানির্মাতার ঘামে ভেজা চিকচিকে কালো শরীর। পথচারী, রিকশা, সাইকেল আর একটা দোকানে মমতাজের স্বর। আর আমার মস্তিষ্ক জুড়ে একটা অবয়বহীন শুধু কণ্ঠস্বরের নারী। আমি তাকে চিঠি লিখি প্রতিদিন।