শনিবার, ২৫ জুন, ২০১১

আঙুলে লিখি আঙুলের ক্ষয়


ভুলে গেছি তার শরীরের ঘ্রাণ – আঙুলের ভাঁজ, বিবর্ণ চর্তুমাত্রিক স্বপ্নের ভেতর ছুটে চলা বিভ্রান্ত পথিক। সামনে দাঁড়িয়ে সব প্রেতের মিছিল। একটা দীর্ঘ ঘুমের প্রত্যাশায় চোখের কোণে রাত্রি টানিয়ে রাখি। আজও আমার মরণ হলো না ভিষণ; তার চোখের তারায় আমার প্রতিবিম্ব নেই – এই সত্য অনুধাবনের পর কেউ কেউ আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয় – আমিওতো আমার ভেতর একা একা থাকি- শব্দের প্রতিধ্বনির সূত্র ভুলে তার কানের কাছে শব্দ করে শব্দের প্রতিফলন প্রত্যাশা করি। আমি তাকে একটা চিঠি লিখতে চাই -  খুব দীর্ঘ এক চিঠি। কিন্তু সে আমার কেউ না, কেউ না। তার চোখে আমি নেই, আমার চোখে সে নেই। আমাদের ভেতর আমাদের মৃত্যু নেই। জানেন, আজো আমার জ্বর। আমার পাশে আমার মা নেই। কেউ নেই। আমি জ্বর নিয়ে কি যেন লিখছি। জ্বর হলে আগে আমি দুঃস্বপ্ন দেখতাম। একদিন জ্বরের দুঃস্বপ্নে আমার মা মারা গেলেন, আমি আর বাবা তাঁকে কবর দিয়ে এলাম-আর কাঁদতে কাঁদতে জেগে উঠলাম। জেগে দেখি আমার জ্বরের কপালে মায়ের শীতল আঙুল। আমি মাকে খুব ভালোবাসি, খুব – খুব – খুব। বাবাকেও। তবে মাকে কেন যেন একটু বেশি ভালোবাসি নিজের অজান্তে। কিন্তু বাবা আমার বন্ধু। মাকে ভয় পাই, মা বকেন এবং মারেন। বাবা মারেন না, বকেনও না। একদিন বাবা মেরেছিলেন, তারপর আমার প্রচণ্ড জ্বর হলো। বাবা তখন আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন। এটা আমি আর বাবা জানি কেবল। ছোটকালে আমি একবার আত্মহত্যা করবো ভেবেছিলাম- কারণ বেঁচে থাকতে ভালো লাগতো না, কিন্তু মরে যেতেও ভালো লাগতো না। আসলে বেঁচে থাকা এবং মরে যাওয়া দুটোই বিরক্তিকর। ভেতরে লালন করি রক্তমাংশমন। ভেতরে দহন করি আঁধার আপন। আঙুলে স্পর্শ করি আঙুল আমার। এ কথা সত্য আমি একবার প্রেমে পড়েছিলাম। আসলে প্রেমে মানুষ পড়ে অর্থা মানুষের পতন হয়। প্রেমে পড়ার পর ভাবলাম বড়ো হয়ে গেছি আমি এখন সিগারেট খেতে পারি। কিন্তু সিগারেটে খুব র্দুগন্ধ এবং বিস্বাদ। তথাপি ভাবলাম বড়ো হয়ে গেলে সিগারেট খাওয়া যায় কেননা সিগারেট শব্দটা আমার পছন্দ এবং ধূয়া ছাড়াটাও। রাতে আমার ঘরের দরজা বন্ধ করে সিগারেট খাচ্ছিলাম। মা এসে দরজা ধাক্কালে দরজা খুলে দিলে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, সিগারেট খাচ্ছিস? তারপর আমাকে আর কিছুই না বলে দেয়ালে নিজের মাথা ঠুকতে থাকলেন। বাব এসেও আমাকে কিছু বললেন না। মাকে নিয়ে গেলেন। আমি একা একা বসে থাকলাম সারারাত জেগে থেকে। আমার আর সিগারেট খাওয়া হলো না। আমি এখন আঙুলগুলোকে সিগারেট ভেবে টেনে টেনে ধূয়া ছাড়ি। মাথার ভেতর ঘুম আর হরিতের ঘ্রাণ। আর কোন চিন্তা নেই। হারিয়ে যাওয়া যষ্টিমধুফুলের সংসার। কতগুলো দৃশ্য চোখের ভেতর। ফোন আসছে, কে যেন আমাকে ডাকে, হ্যালো, হ্যালো। একটা নাম্বার থেকে আমার খুব ফোন আসতো। ফোন ধরলে ওপাশ থেকে কেউ কথা বলতো না। খুব জানতে ইচ্ছে হলো ওপাশে কার নিঃশ্বাস পোড়ে। একটা নতুন সিম কিনে আমি ঐ নাম্বারে ফোন দিয়েছিলাম। একটা মেয়ে কণ্ঠ হ্যালো হ্যালো করলো, আমি তখন তার মতো চুপ করে ছিলাম। আরো একবার ফোন করলে সে আবারো হ্যালো হ্যালো বলে আর আমি চুপ করে থাকি। তারপর সে একটা গাল দিয়ে ফোন রেখে দিলো। আমি স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলাম। একটা সবুজ চুপচাপ গিলে খায় মদ। একটা হলুদ ঝেরে ফেলে জীবনের রঙ। বহুদূরে পাহাড় আছে, গারোপাহাড়। আরো দূরে শাদা মেঘের পাহাড়। স্কুল থেকে ফেরার পথে দুইটা পাহাড়ই আমাকে টানতো। গাছের ছায়ায় শুয়ে শুয়ে মেঘ দিয়ে পুতুল বানাতাম। যুদ্ধ খেলতাম। আর গারোপাহাড়ের দিকে তাকিয়ে ভাবতাম একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে পাহাড়ে চলে যাবো। আমার আঙুলে ব্যথা। তুমি কি বুঝতে পারো চিঠি পড়ে আঙুলের ক্ষয়?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন