শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১১

ইচ্ছেগুলো একেকটা পাখি


যেতে যেতে মনে পড়বে তোমার স্মৃতি। আমি তখন একটা মেঠোপথ, ঝুমুর দুপুর। একটা উড়ন্ত চিল। তার পালকের ছায়ায় আহত রোদ। আলস্যে ক্ষয়ে যাওয়া গোলাপ পাপড়ি। কারো নথ জুড়ে বিষণ্ণতা নিয়ে জমে থাকা সুন্দর। তোমার নখে মুছে যাওয়া ম্লান নেইলপালিশ। ঝড়ের বাতাসে ঘূর্ণায়মান ঝরাপাতা। ঘুমে জড়িয়ে থাকা চোখের পাতা।


ইচ্ছেগুলো একেকটা পাখি। পাখিরা উড়ে যায়।

দেখো ক্ষয়ে গেছে দুপুরের রোদ, এলো চুলে হেলানো নারকেল গাছটার ছায়ায় জমজ পাখি। এক পায়ের এক শালিখ উড়ে এসে খুঁটে খায় অন্ধকার। বেঞ্চিটার একপাশ খালি। তুমি এখন নীল রঙের জোছনা জড়িয়ে পরী, দূরে কোথাও। তুমি একটু এ দিকে এসো। এইখানে। আমার আঙুলগুলো ছুঁয়ে দেখো, কম্পমান।


আমাকে স্পর্শ কর, আমি আহত।

সে আমাকে খুব ডাকে, ডেকে ডেকে বলে- আমার নাম বলো। বলো দীর্ঘ ই। আমি কবেই ভুলে গেছি ভাষা। তাই চুপচাপ তার চোখ দেখি। তার চোখে দীর্ঘ অমাবশ্যা। তার কণ্ঠে নদীর গাঢ়ো মায়া স্রোত। একদিন নদীতে ভেসে গিয়েছিল একটা মরা হিরামন পাখি। সেই থেকে সুর ভুলে গেছি।


ভেতরে তার নাম জপে বোবা হয়ে থাকি।

চলে গেলেও পারি, কিন্তু কোথায় যাব? আমারতো একার একটা পাহাড় নাই, একটা নদীও নাই। আমার কেবল আমিই থেকেছি সারাজীবন। যদিও প্রতিবার রক্তের ভেতর জেগে থেকে দেখেছি গোপন; আর বার বার ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়েছি শহরের প্রাচীন দেয়াল। তবুও কোথায় যেন হারিয়ে যাওয়ার আগে কেউ আমাকে পত্র দিতো চুপচাপ, আমন্ত্রণ জানাতো তার ভেজা শহরের নিঙরে নেয়া আলোয়। এবং আমি নীরবে ভোরের দিকে মরে পড়ে থাকতাম.... কোথাও


জানি না

সারাটা সন্ধ্যা বিষণ্ণতায় একা রেললাইন
দ্বিধার আঙুলে স্পর্শ করি রাত
শিরা কেটে আত্মহত্যা করে গভীর ছায়া
আমি আর ছায়া মিলেমিশে একাকার


লাল লাল রক্ত জবা

চোখের শরবনে একটা দৃশ্যের নগর। সেখানে পুরাতত্ত্বের গভীর বিজ্ঞান। আলো ফেলে উজ্জ্বল উদ্যান। উড়ে এসে গান গায় হিরামন পাখি। পাখির পালকে উৎসবের জরি। এই শহরে বর্ষা নেমে এলে গান হয় চারুবন। নীল আলোয় রাত্রিধোয়া শরীরে ক্ষয়ে যায় পুরাতন।


কেবল বৃষ্টির উৎসবই নূতনকে স্বাগত জানানোর উৎসব হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে।

স্বপ্নে হারিয়ে ফেলেছি মায়ের নাকফুল। দাদুর নাক থেকে যেটি উত্তরাধিকারে মায়ের নাকে শোভা পেয়েছিল। ছোট্ট বড়ইয়ের ফুল। শেষ বিকেলে সবুজ পথটা সোনা রঙে ভাসে। আমি সেই সোনা বড়ইয়ের ফুল খুঁজে খুঁজে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আনি।


নাকফুল। জ্বল জ্বল করে জ্বলে সন্ধ্যার আকাশে। আমি একটাও কুড়াতে জানি না।

সম্পর্ক বয়ে আনা সন্ধ্যায় দু'জন জীবনে মিশে যাওয়া ট্রেন লাইন। পাশাপাশি অথচ আলাদা। শাদা দীর্ঘ চিকন দুটি সাপ অন্ধকার চুষে চলে। দূরে কোথাও ভ্রমে একাকার, বাস্তবে আমৃত্যু পৃথক।


সন্ধ্যার ট্রেনলাইন। শীতল বাতাস। দূরে সিগন্যাল।

যখন নিজের ভেতর নিজেই ডুবে ডুবে দিগভ্রান্ত তখন তোমার চিঠির আর প্রয়োজন হবে না ভেবে দু'টি জীর্ণ চোখে বুনে দেব স্বপ্ন, ওরা সুন্দর হয়ে উঠবে। আসলে এগুলোর কোন মানে নেই। যেমন অর্থ খুঁজে পাইনি আমি বেঁচে থাকার।


অথচ ফল পাকার দিনে একটা পাকা ফল হয়ে ঝুলে থাকতে চেয়েছি চিরকাল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন