বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১

চোখ মরে গেছে, মিথ্যা আলোয় দৃশ্য রচনা করে মন


আয়নায় মুখ দেখি। এতবার দেখা মুখ তবু অচেনা ঠেকে। এই যে জড়িয়ে যাচ্ছি অচেনা আমিতে, যখন বিস্মৃতির জঙ্গল থেকে জেগে উঠবে বিষধর কেউটে, তখন তুমি কি করবে? শুধাই আমায়। আমি একচিলতে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থেকে বার বার ঘুরে ঘুরে আমাকে দেখি। চোখের পাতায় আঁকি মৃত্যুরঙের ফুল।

নিজের ভেতর অবলুপ্ত শহর। আমি তার মেয়রকে গোপনে চিঠি লিখি।

সে বলে এই সত্যের আড়াল থেকে তুমি বেরুতে পারবে না। দেখো এই বিরান ভূমি। আমার ভেতর লাল হয়ে জমে থাকা তৃষ্ণা। তুমি আমাকে স্পর্শ কর একবার মৃত্যুর জন্য। এই আড়ালে তোমার মগ্নতা ভেঙ্গে ফেলো ঋষি। দেখো আমি উতলা পুঁই গাছ।

একটা বন্ধ ঘরে আমি তখন জেগে উঠি। রোদ।

শৈশবে আমাদের এখানে এক মহিলা ভিক্ষুক আসতেন ভিক্ষা নিতে। তার একটা চোখ পাথরের ছিলো। সে এসেই তার পাথরের চোখ খুলে আমাদের তাক লাগিয়ে দিত। তারপর আমরা আবার তার চোখ খুলে ফেলার খেলা দেখতে চাইতাম। কিন্তু সে তখন তার অনেক ক্ষতি হবে বলতো এবং ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে সে পুনরায় চোখ খুলে দেখাতে রাজী হওয়ার কথাও বলতো, আমরা তখন খেলা দেখতে নারাজ হতাম। একদিন খুব অভাবে পড়ায় সম্ভবত সে দশ টাকার বিনিময়ে তার চোখ খুলে দেখানোয় রাজী হয় কোন রকম ক্ষতিপূরণ ছাড়াই। একটা স্বচ্ছ গ্লাসে চাপকলের শীতল জলে তার পাথরের চোখটি খুলে রাখে সে, আমরা বিস্মিত হয়ে সেই চোখটিকে গ্লাসের জলে ভাসতে দেখি। বড় কুৎসিত লাগে।

বহুদিন পর নিজেকে জলে ভাসা কুৎসিত চোখ বলে মনে হচ্ছে। আমার পাপবিদ্ধ মন।

মনবাড়িতে একা একা ট্রেনকাটা রোদে দাঁড়িয়েছিলাম। অদূরেই এক জাদুকর তার ঝোলার ভেতর থেকে বের করে আনলো অনেকগুলো মরা চোখ। ঘোর লাগা চোখে আমরা সেই চোখ দেখি। দেখি রুমালের আলোড়নে মাটি হয় ধন। ছুঃমন্তরে শূণ্য থেকে ধরে ধরে আনে নতুন টাকার নোট। তবুও জাদু শেষে সে বিক্রি করে কৃমির ওষুধ।

জানি তার চোখ মরে গেছে। তবুও মিথ্যা আলোয় দৃশ্য রচনা করে মন।

সত্য এই, মানুষেরই রয়েছে মানুষের রূপ। কেউ একটা ভুল পথে অন্ধকার, আমার চোখ জুড়ে রোদ চশমা। অন্ধপাখির গান। মজে আছি ডুবোপ্রেমে, আঙুলের স্পর্শে সোনা হয় কাঠ। স্মৃতি মুছে চাষ করি শিলালিপি। মেঠোঘরে পাঠ করি দেয়াল লিখন। রাত্রি এসে ফিরে যায় ঘুম শহরের পথে একা একা। আজ কোন ট্রেন আসেনি। হেঁটে হেঁটে ঘরে ফিরি তার কাজলটানারাতে।

তরল সকল প্রতিবন্ধকতা পাশ কাটিয়ে গতিশীল, বুঝি প্রেম

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন