সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১

স্বপ্নঘুড়ি


ছেলেটা রুদ্রঘাসে নিজেকে জড়িয়ে রাখলো বহুক্ষণ। শঙ্খমিত্রার জলে স্নান শেষে চরে হাঁটলো, দৌড়ালো এবং বসেও থাকলো চুপ করে বেশ সময়। ছেলেটা মাটিতে ঘুড়ি আঁকলো, লাল। ঘুড়িটা হঠাৎ করেই উড়ে গেল দূর। ঘুড়িটায় জড়িয়েছিলো রোদ আর ঘুড়িটা বাতাস হয়ে উড়ে। উড়ে উড়ে ছাদের কানির্শের কোন এক তারে ঘুড়িটা জড়িয়ে নেয় নিজেকে। ছেলেটি হাত বাড়িয়ে ধরতে চায় খুব, কিন্তু ঘুড়িটি নাগাল থেকে দূর। তবু ক্রমাগত সে চেষ্টা করে যায়। দূর থেকে ভেসে আসে মায়ের কণ্ঠে ডাক – মি হি র; মি হি র ; মি হি র ।

অতঃপর সে জেগে ওঠে। ভোরের আলোয় আটকে থাকা দেয়াল। তার শরীর জুড়ে কাঁপন। মায়ের ব্যস্ততা। বাবার নীল শার্টে রুদ্রের ফুল আঁকা। আজ স্নান ঘরে মিহি স্তব্ধতা। জল নেই। স্নান নেই।

আকাশটা নীল। ছেলেটির স্কুলে পড়ার ড্রেস। কাঁধে থলে বোঝাই বই। সে যখন স্কুলে যায় তখন আকাশে উড়ে সাহাবুদ্দিনের হলুদলাল ঘুড়ি। আরো কয়েকটি ঘুড়ি ওড়ে, নীল আর সবুজ। সাহাবুদ্দিনের ঘুড়ি হলুদ আর লাল মিলেই হয়। ঘুড়ি দেখতে দেখতে আর মনের মাঝে একটা লাল ঘুড়ি আঁকতে আঁকতে ছেলেটি স্কুলে যায়। সে ঘুড়ি হয়ে উড়ে উড়ে যায়।

সারাটা দুপুর জানলা দিয়ে আকাশ দেখে, পড়তে ইচ্ছে হয় না তার। লিখতেও ইচ্ছে হয় না কিছু। স্যারও কেমন ঢুলেন! একটা সাইকেল আঁকতে ইচ্ছে করে মিহিরের, কিংবা একটা চিল অথবা লাল ঘুড়ি। সাহাবুদ্দিনের হলুদলাল ঘুড়িটাকে দৈত্য মনে হয়। রঙিন রঙিন ঘুড়িগুলোকে কেটে দেয়। ওগুলো উড়তে উড়তে কতদূর চলে যায়! তার লাল ঘুড়িটাকেও সাহাবুদ্দিনের ঘুড়ি কেটে দিয়েছিলো। সে কাটাকুটি খেলতে চায়নি। কি সুন্দর উড়ছিলো ঘুড়িটা! হঠাৎ সাহাবুদ্দিনের হলুদলাল এসে প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়। সুতা টেনে টেনে নামাতে ঘুড়িটা কেটে দেয়। টানটান ঘুড়ির বুক কেটে দিতেই কেমন বাঁধন ছাড়া হতাশ প্রাণহীন উড়ে যায়। কতদূর যায়! ক ত দূ র!! আহারে লালঘুড়িটা!!

স্কুল শেষে কোচিং, তারপর ব্যাচে প্রাইভেট টিচারের কাছে পড়া শেষ করে সন্ধ্যা আর সে এক সাথেই ঘরে ফিরে। তখন সব ঘুড়ি আকাশ থেকে নেমে যায়। বাতাসে শাদা শাদা আযান ভাসে। বাসার কাছে আসতেই দেখে তাদের বাসার ছাদের কার্ণিশের কাছে সুপারি গাছটায় একটা লাল ঘুড়ি ঝুলে আছে। হয়তো কেটে এসেছে কোথাও থেকে। সে দৌড়ে ছাদে উঠে। কার্নিশের কাছে ছুটে যায়। একটুর জন্য ধরতে পারে না সে ঘুড়িটাকে। আর একটু হাত বাড়াতেই সে ঘুড়ি হয়ে উড়তে থাকে। ধাতব আঘাতের একটা ভোঁতা শব্দ শ্রবণে আর যন্ত্রণা অনুভূতিতে থাকে। আর তখন আর সন্ধ্যা থাকে না। একটা উজ্জ্বল আলোয় নীল আকাশে সে লালঘুড়িটাকে নিয়ে উড়তে থাকে। সকল কাটা ঘুড়ির মতো সে আর লাল ঘুড়িটা দূরে উড়ে যেতে থাকে।

মিহিরকে জড়িয়ে ধরে তার মা রিক্সা করে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিলেন। রক্তে মায়ের শাড়ি ভিজে যায়। মা ‘মিহির মিহির’ নামে ডাকে। কিন্তু তিনি জানেন না, মিহির তখন লাল ঘুড়ি হয়ে অনেক দূর উড়ে গেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন