শনিবার, ১১ আগস্ট, ২০১২

দ্য গেইম


সে গুণে দেখলো বড় প্যাকেটটিতে আরো ১৬৮ টি কনডম রয়ে গেছে। তাহলে গত তের মাস চব্বিশ দিনে ৭২ টি কনডম ব্যবহার হয়েছে, মনে মনে ভাবলো সে। কারণ প্যাকেটটি ছিলো বিশ ডজন আমেরিকান কনডমের। পারিবারিক স্বাস্থ্যক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যকর্মী মহিলাটির কাছ থেকেই সে কিনে এনেছিলো। এখনো দিব্যি মনে আছে। মহিলা বলেছিল এতোগুলো জিনিস আসলে একজনকে একসাথে দেয়া হয় না। সে কখনো মহিলার চোখের দিকে চোখ রাখেনি। মহিলা খুচরা দিতে পারছিলো না বলে আরো এক প্যাকেট দিয়ে দিবে কিনা জিজ্ঞেসও করেছিলো। কিন্তু তারপর মহিলা নিজ থেকেই বললো, মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। তখন সে দেখছিলো টেবিলের কাচের নিচে জন্মনিয়ন্ত্রনের বিভিন্ন পদ্ধতির ছবি সম্বলিত কাগজটার বর্ণনা। না, সে ঠিক ছবি দেখছিলো না আর বর্ণনাও পড়ছিলো না। কিন্তু সে ও দিকেই তাকিয়ে ছিলো। আর যখন মহিলা ২০ ডজন আমেরিকান কনডমের প্যাকেটটি একটা পুরনো খবরের কাগজে মুড়িয়ে তার সামনে রেখে মহিলার নির্ধারিত আসনটিতে বসে বললো, এই নিন। তখনই সে খেয়াল করলো যে, সে খুব গভীর দৃষ্টি নিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রনের পদ্ধতিগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে যদিও প্রকৃত অর্থে তার ওদিকে কোন মনোযোগই ছিলো না এবং মহিলাটি এটি টের পেয়ে গেছে ভেবে সে কিছুটা বিব্রত হয়েছিলো। হ্যাঁ, তার এই প্যাকেটটিতে এখন ১৬৮ টি কনডম অবশিষ্ট্য রয়েছে।
কনডমগুলো হাতে নিয়েই সে মনে করতে চেষ্টা করলো তার স্ত্রীর সাথে তার শেষ কথোপকথন কি ছিলো। তার মনে পড়লো, গত মাস তিনেকের শীতলতার পর সেদিন ঘুমন্ত তাকে তার স্ত্রী চুমু খেয়েছিলো। চুমুর পর সে যখন তার স্ত্রীকে ঘুমের ঘোরে আরো কাছে জড়িয়ে নিতে চাইলো তখন তার স্ত্রী অভিযোগ তুললো তার মুখে ঘুমের গন্ধ লেগে আছে। তারপর ঘুম ভেঙ্গে গেলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নির্ধারিত সময়ের পঁচিশ মিনিট পর তার ঘুম ভেঙ্গেছে। সে নিজেকে স্ত্রীর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে স্নানঘরে ঢুকে। স্নানঘর থেকে বের হয়ে প্রতিদিনের মতো টেবিলে সাজানো সকালের রুটি আর ভাজি খেয়ে নেয়। তারপর চা খেতে খেতে শার্ট আর প্যান্টটা পড়ে নেয়। তখন তার স্ত্রী জানালা দিয়ে ওপাশে পুকুরের স্নানরত মানুষদের দেখছিলো। যাওয়ার সময় সে বলেছিলো, যাচ্ছি। এ কথা শুনে তার স্ত্রী 'আচ্ছা' বলেছিলো কি না সে মনে করতে পারলো না। যদি 'আচ্ছা' বলে থাকে তবে সেটাই ছিলো তার শেষ কথা। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে সে তার স্ত্রীকে আর বাসায় পায়নি।
স্ত্রীর সাথে এমনিতে তার সম্পর্ক খারাপ ছিলো না। মূলত সে নিজেও মানুষ খারাপ নয়। চারবছরের সংসার জীবনে স্ত্রীর সাথে তপ্ত বাক্য বিনিময় পর্যন্ত হয়নি। সে ভেবে দেখলো, তার স্ত্রীকে নিয়ে সে সুখেই ছিলো। এমনিতে সে একটু আত্মকেন্দ্রিক চাপা স্বভাবের। নিজের ভালো লাগা, মন্দ লাগাগুলোও স্ত্রীর সাথে শেয়ার করেনি। সে মনে করতে পারলো না, স্ত্রীর সাথে সে কি বিষয় নিয়ে কথা বলতো। তাদের যৌন সম্পর্কেও দূরত্ব তৈরি হয় সেদিন থেকে যেদিন সে আবিষ্কার করলো তার স্ত্রী মাঝ রাত্রিতে কারো সাথে ফোনসেক্স করছে। খু্ব ঘেন্না ধরে গেলো তার। সে আর তার স্ত্রীর প্রতি সেক্স অনুভব করতো না।
ফোনসেক্স না, অন্যকারো সাথে সঙ্গম করলেও তার হয়তো এতোটা ঘেন্না লাগতো না যদি তার স্ত্রী তার সাথে প্রতারনা না করতো। তার মনে হলো এটা প্রতারনা। হ্যাঁ, সেটা রুমেলই হবে হয়তো। রুমেল তার চেয়েও সুদর্শন। বয়সেও বছর চারেকের ছোট। আচরণে চমৎকার। তার সাথে রুমেলের পরিচয় করিয়ে দেয় তারই এক বন্ধু। সিনেমা পাগল রুমেলকে একদিন সে বাসায় নিয়ে আসে। তার সিনেমার সংগ্রহ ছিলো খুব। রুমেলেরও ছিলো। তাই ঘন ঘন সিনেমা দেয়া নেয়ার ব্যাপারে বাসায় আসতে শুরু করে। ঘন ঘন আসাটা প্রতিদিন আসায় রূপ নিলো। সে বুঝতে পারলো, রুমেলের ভার্চুয়াল সিনেমার চেয়ে বাস্তবিক কোন সিনেমার প্রতি আকর্ষণ রয়েছে। এবং ব্যাপারটায় সে নিজেও মজা পাচ্ছিলো। দেখা যাক বিষয়টা কোন দিকে গড়ায়- ভেবেছিলো সে।
গেইমটা সে খেলতে চেয়েছিলো রুমেলের সাথে আর খেলার উপকরণ ছিলো তার স্ত্রী। নিজের উপর প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস ছিলো তার। রুমেলকে সে বেশ কিছু সুযোগও দিলো, রুমেল যেন ভাবে খেলোয়ার হিসেবে সে দুর্বল ও বোকা। কিন্তু এক সকালে রুমেল একটা ভুল চাল দিলো আর সাথে সাথেই সে ধরে বসলো রুমেলকে। বোকাচোদা রুমেলও সাথে সাথে তার পায়ের কাছে পড়ে গেলো। অনুনয় করে বলে উঠলো, 'ভাই, আমি শুধু আপনার কাছেই আসি। আমার কোন দোষ নাই। আমার মনে কোন পাপ নাই।' শালা খেলা জমার আগেই হেরে বসতে চায়! ওখানেই খেলা শেষ করতে চায়নি। আরো খেলতে চেয়েছিলো সে। তাই নিজেকে সামলে নিয়ে সেজে বসেছিলো বিরাট বোকা। যেন এসবের কিছুই বোঝে না। কিন্তু কিছুদিন পরই বুঝতে পেরেছিলো আসলে সে নিজেই হেরে যাচ্ছে বল যখন গোলপোস্টে ঢুকে যায় নিজের ইচ্ছায় খেলোয়ারের দক্ষতা সেখানে অসহায়
সেই রাতে যখন সে প্রথম আবিষ্কার করে তার স্ত্রী তাকে ফাঁকি দিয়ে ফোন সেক্স করছে, প্রথমে সে বিপন্ন বোধ করে। সে বুঝে উঠতে পারে না যে তার কি করা উচিত। আর এরপর থেকে সে তার স্ত্রীর প্রতি প্রচণ্ড ঘেন্না অনুভব করে। মনে হয় তার প্রতারক স্ত্রীর শরীর জুড়ে শুয়ো পোকা আর শুয়ো পোকা। কাপড় নাড়লেই টপাটপা পড়তে থাকবে। তাকে তার ছুঁতে ইচ্ছে করতো না মোটেও। তারপর ধীরে ধীরে দূরত্বের বসবাস এবং একদিন তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে রুমেলের কাছে চলে যায়। তার স্ত্রী চলে যাওয়ার পর সে বিভ্রান্ত হয়ে যায় এই ভেবে যে গেইমটিতে তার অবস্থান কোথায়, জয়ে না পরাজয়ে? কিন্তু আজ ১৬৮ টি কনডমের প্যাকেট হাতে সে যখন স্ত্রীকে অন্যের আশ্রিতা ভেবে ভোগের কল্পনায় তখন তার শরীর প্রচণ্ড জেগে ওঠে আর নিজেকে খুব জয়ী মনে হয়। সে ১৬৭ টি কনডম বাতাসে ফুলিয়ে ঘরে ঝুলিয়ে রাখে আর অন্যটি তার শরীরে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন