মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০১১

পদ্মপুরাণ


পাতাবাহার দেয়ালের পাশে সবুজ জল,
ছায়া আর স্মৃতির কালো দীঘি;
নিমজ্জিত শরীরের ঘ্রাণে উষ্ণতাবন্দী
বাষ্প জড়িয়ে থাকে হাওয়ায়।
কোথাও কোলাহল স্বর থেকে বিচ্ছিন্ন গতিশীল-
মাটি আর উদ্ভিদের অশ্লীলতা
ধারণ করে বেড়ে ওঠা জলজ ভ্রুণ,
আধপোড়া কাঠের কব্জায়
সেঁটে থাকা লোহার পেরেক
স্মৃতি ও বিস্মৃতি ধরে রাখে;
নিবিষ্ট পাপের কাছে বশীবত:
পিঠের তিলে কৃষ্ণের ধুন
জবা রঙ ঘ্রাণে উদ্বেলিত চুল;
আরো গহীনে ছটফটে অন্ধকার
ক্রমশ: নিকটতর হচ্ছে।

সীমানায় দাঁড়িয়ে সুগঠিত অন্ধকার;
টুকরো টুকরো রাতের ক্রমাগত গহীন যাত্রা
আরো গাঢ়ো হয়ে ফুটে ওঠার জন্য
গহীন অনুভবে বিনিদ্র প্রচেষ্টায় হয়ে ওঠা রাতের ঘ্রাণ।
কে জানে পেলব অন্ধকারকে শোষণ করতে,
কতবার বেজে ওঠে ইন্দ্রিয়ের ধ্বনি
,
কতটি কাঁপনে ছিন্ন হয় উল্লাস
,
বিকৃতির ভেতর মজ্জাগত সুখ
?
গোপনের ভেতর প্রকাশের আনন্দ
ধারণ করেই ফেলে দিতে হয় বিচ্ছিন্নতা।
প্রতিবার আয়োজন করে বসিয়ে দেই দাঁত
লালন করি কোমল মাংশে গোপন করাত
;

এই প্রথম অন্ধকার থেকে আলোর বিচ্ছুরণ দেখি
দৃশ্যের বাইরের দৃশ্যগুলোও দৃষ্টিগ্রাহ্য হলে একে একে পুড়ে যায় হারানো শহর
কেবলই ছায়ার ভেতর খুঁজে পাওয়া ঘটনার কঙ্কাল
যতন করে পুষে রেখো স্মৃতির আলনা
জেনো ঘুনপোকা কাঠ ভালোবাসে

প্রাচীন নগরীর প্রাচীন প্রাচীরের ক্ষতে
লাল পরিচ্ছদে আবৃত কিশোরীর মোলায়েম হাত
শিখে নিচ্ছে পুরাতন ইতিহাসের ঘ্রাণ
;
রোদঘরে জমে থাকা জলের বসনে ঘাম
**************************
এই শহরে আমার কেউ নেই
পাথরের গায়ে হেলান দেয়া অবিমিশ্র অন্ধকার
পাশাপাশি শুয়ে থাকা নৈঃশব্দ্য
কাছের মানুষের দীর্ঘশ্বাসে
ভেঙ্গে পড়া সাধনার সুর:
কোথাও আজ আগুন জ্বলে যাবে।
শহরটি আমাদের ছিল বহুদিন।

যদি এবার পথ হয়ে এসো আমাদের ভেতর গুপ্ত স্বপ্নের বীজে হাহাকার রোদ
যদি এই আলোয় ভেসে যেতে থাকে জমাট আকাশ বিবর্ণ ক্ষত আর মৃত্যুপুষ্পিকা
তবে পুনঃবার প্রেম হবে
এই পথ আরো দীর্ঘ হবে
ধূলোয় লুটানো যত ঘাম
তৃষ্ণাও আকাল ও অন্ধকারে ম্লান
কিছুটা নরোম উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে রোজ
পথও পথিকের জন্য কাতর;
এখনো নগর থেকে ভেসে আসে প্রার্থনার ডাক, সিনেমার পোস্টারে কমুদ প্রাশান
এলো কেশে নাগরিক উত্থান, কবি কখনো পথ, কখনো পথিক, একটা নগর হবে নষ্টপ্রাচীন
তবে একটা নগর হোক নাগরিক সন্ধ্যায়

বাঁশপাতায় মুদ্রিত দুপুরের রোদ
হল্লার আকাশে মেঘমেদুর অবয়ব
ক্ষণেই বিবর্তন;
একটা গান সুর হারায় রোজ
একটা ফুল চির ব্যাকুল
যে সন্ধ্যায় অন্ধকার আলোর সাথে পৃথক
দু'চারটে পোড়া পাতায় ছাই আর পোড়া ঘ্রাণ
সে সন্ধ্যায়ও বাঁশপাতায় আলো ফেলে পোড়ামুখী চাঁদ।
কেউ খুন, কেউ আলো
ভুল পথে পথ হারালো

পরিপূর্ণ পাথর গলে যাচ্ছে
পাথরের গায়ে লেগে থাকা স্পর্শধাতু;
কোন গোপন নক্ষত্র চিত্রিত করে গেছে স্বর।
পাথর রূপান্তরিত ইথারে বিচ্ছিন্ন গতিশীল-
খণ্ড হোক অখণ্ড সময়;
ধারণ করা হোক সমুদয় সুর
এবার বেজে ওঠো প্রিয় সেতার
রাগে রাগে মুদ্রিত কর
পাথরের গায়ে লুপ্ত হরফ।
জাদুকরের ঝোলায় বিনীত আগুন
পোড়া অঙ্গারে লাল রঙে রঞ্জিত ধূপ।
পূণ্যবান সিদ্ধিপুরুষ
আজ রাত মহামান্বিত করে
চূর্ণ করবে পাথর মুখোশ।

তার ভেতর এক অপূর্ণ রোষ
ঘুরে ঘুরে শূন্য হয়ে ওঠে
পুরাতন মরুজ পথ আর কাঁকড়ের
সংস্পর্শে জমে থাকা ধূলো
পরিচ্ছদের বাহারে ঝলক আলো
আর পরিচিত শহরের হাওয়ায়
উড়ে যাওয়া পাখির পালক
তাকে নিমগ্ন করে-
এবার দ্বিতীয় উসবে গ্রামে ফেরা হবে
লাল মাঠের তরুণেরা
ঠিকঠাক বেছে নেবে প্রিয়তম পথ
একচিলতে রোদে শুকোতে দেবে
ভিজে যাওয়া মেঘের পরশ;
তাকে পাশে রেখে
বাঁশরীর রাতে সুরে সুরে স্নানে হবে চন্দ্রদহন।
তারা এবার ভুলে যাবে দহনকাহন
তাদের চোখে চূর্ণ হবে বিষাদের রঙ
ক্রমশ: রূপান্তর হবে ছায়া
তাদের সামনে পড়ে থাকবে শুধু এতোটুকু উঠোন!

পুতুলটা মৃত; অথচ সবুজ হয়ে শুষে নিচ্ছে হরিতের ঘ্রাণ
টুপটাপ কুয়াশার বৃষ্টিতে নিমগ্ন ভোর- ধরানো আগুনের শিখায় ঘূর্ণীতোলা ছাই
পুতুলটা শিখে গেছে মৃত্যু আর জীবন একাই;
একটি গাছের একটি পাতা ঝরে পড়ায় নাদ
বয়সের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা শৈশব দৃশ্য উড়ায় আধপোড়া হলুদ পাতায় মুদ্রিত মথ ইতিহাস
পুতুলটা রক্তাক্ত - রক্তহীন শাদা

১০
এখানে সমাদৃত সুর প্রথমে উত্তাল
তারপর অনুসৃত মজ্জার আঁধার-
পরস্পর পরস্পরের দিকে গতিশীল চোখ
চোখের গহীনে রাতজাগা নিশির অসুখ।
সহিষ্ণু পথে বাঁশির ফাড়ল জুড়ে কান্না
সুর বিদীর্ণ মস্তিষ্কে বোধের অনুরণন
এক এক বিন্দু আলো রূপান্তরিত পাপ
আর একটা ময়ূরী পেখমে বিকীর্ণ অভিশাপ।

১১
০০০০০
এখন প্রথাগত পাকুরে
মুষরে পড়ে হাতের আঙুল
দূরে রও অলক নিষাদ
ভোর হও প্রণয়ের ঘোর
০০০০
চোখ বুজলেই সব থেমে যায়
প্রথমে দোদুল্যমান
অতঃপর অতীতের দিকে যাওয়া-
করোটিতে সাজিয়ে রাখা অতীত দেখি
ইচ্ছে হলেই নতুন করে অতীত বানাই-
০০০
দামেস্কের উদ্যানে শরাবের গ্লাস
ঠোঁটে লাগিয়ে রাখি শীতল ঘ্রাণ
ঘোর চোখে ভাঁজে ভাঁজে বিষাদের সুখ
চিবুকের নিকট শুঁকি পদ্মপুরাণ
০০
ওখানটায় সবুজে লুকিয়ে রাখো
মদ আর ঔষধি লতায় হরিতন বিষ
বিষে নীল ঠোঁটে কামড় দিয়ে রাখি দাঁতের চিহ্ন

ইচ্ছে করে খুন করি একটা---
চুপিচুপি
চুপি চুপি
খুব নিপুন ভাবে

১২
কোথাও সে ঠোঁটের গোপনে চুপচাপ কান্না
একটা আঁধার পরস্পরের স্পর্শ থেকে দূর
পায়ের কাছে জমা হয়ে থাকা পোষা অসুখ
নিঃশ্বাসে ছড়িয়ে দেই ঘ্রাণের আধখোয়া রোদ
শাদা পাথর আঁকড়ে ধরে হিরন্ময় লাল
একবার অনুমিত হত্যার দমকা বাতাস
ঝড়ের গুপ্তবনে মুরালি ভিষণ
তারা চুপচাপ লেবুবন
কপালের চুল জানে হাওয়ার দিক
আঁচলে বনের মানচিত্র আঁকা
তার বুকের কাছে নত লেবুফুলঘ্রাণ
আর চোখের নিদ্রায় হরি
 উল্লাস।

১৩
এই চোখ কোন এক র্নিবর্ষ অন্ধকারে ডুব দিয়েছিলো নদী
বেলির শাদায় জড়ানো মথ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বসন খুলে
তার পুজোর সময় কেউ উলু ধ্বনি দেয়নি, বাজেনি শঙ্খ
শাদা ধূতিতে আলতার রঙ ব্যাকুল হয়ে ডুবে ডুবে বৈচিত্র।
সুপরিমিত বাঁকে আকণ্ঠ নেশায় চুম্বন দৃশ্যগুলোকে অস্পষ্ট করে তুলে
একে একে গহনঘ্রাণে জড়িয়ে যায় জিহ্বার ধার পূর্ণতারপাপে
ধীরে বসে চাষ করি কনকলতা, সাপের মতো প্যাঁচিয়ে প্যাঁচিয়ে
চুষে নেই মধু, তাকে হত্যার আগে তার রক্ত বিষে সিনান করি।

১৪
দুইটা চোখ আড়াল থেকে আলো; দূরের দৃশ্য থেকে বিপরীত শূন্যতার সবুজ চাষ। কয়েকটি মুহূর্ত পোষে রেখে রোদ কাতর ও বিনীত স্পর্শে অশ্লীল। তাদের চোখ কারুকার্যময়, তাদের ঠোঁট জ্যামিতিক বক্রতায় ক্রুদ্ধ। তাদের এই যাত্রা ভালো, তাদের এই কলহ কবিতার জন্য; ভালো লাগে।

১৫
একটি ক্ষুদেচিঠির প্রতীক্ষায় রাত্রি গভীর
ঝিঁঝিঁদের গাঢ়ো স্বরে মেঘময় স্থির আকাশ
সবুজ আলো জ্বেলে নিজেদের অস্তিত্ত্ব
পাশাপাশি রেখে সুগঠিত শরীর খুঁজি
চিঠি আসে নাই
আজ রাত কোন ক্ষয় নেই? প্রেতরা ফিরে গেছে?
আজ রাত তবে ভয়হীন
কোলবালিশে নরম পা দেবে আছে
আজ রাতে তবে বৃষ্টি হবে না
মেঘেরা থির ঘিরে আছে চাঁদ
কারো ঠোঁটের পাশে গাঢ়ো জ্যোস্না ফেলে
চুরি করা যাবে না গভীর নিঃশ্বাস!

১৬
আঙুলগুলো ভাঁজ করে রেখেছি
নিস্তরঙ্গ সত্ত্বায় এগুলো একদিন জেগে উঠবে
আমি তার ভোরবেলার কান্নায় নিমজ্জিত থেকে সকাল হয়েছি
কারো চোখে শিশিরের টুপটাপ পতন
অন্ধবালিকার শ্বেতমনিতে প্রতিফলিত আলোর সবটুকু মন্থন-
স্মৃতিদের মৃত্যু অনিবার্য
আমি তার পাপের উলানে দু'মুখো সাপ-মদ পান করি।

১৭
হ্যাঁ, আমি স্বীকার করেছি। রুদ্র আর মেঘের আড়াআড়ি কোন পথে পৌঁছে যাব গন্তব্যে। চোখের রেটিনায় প্রতিফলিত সকল দৃশ্য সংরক্ষিত। স্পর্শঘ্রাণেশ্রবণে সে আর পাপ পাশাপাশি রাত জাগে। পাথরে খোদাইকৃত কোন চিত্র মুছে দেয়া যাবে, কিন্তু সেটা হারাবে না কখনো। তরঙ্গাকারে তা বিবর্ধিত ক্রমশঃ।
আর আমি এও মনেকরি, সকল সীমানা ছিন্ন করা হোক। বিপরীত রক্তের চাষ চিরকাল চিরকাল আর নয়। তাকে হত্যার আয়োজনে একটা বাদ্য বাজানো উচিত। বাদ্য শোক ও হর্ষ উভয়ই ধারণ করে।

১৮
আহত ডানার নীল ফড়িংটি সারা সন্ধ্যা আমার জানালা জুড়ে উড়াউড়ি করে
আমি তার গান শুনে ঘুমিয়ে পড়ি
স্বপ্নে সে ও আমি সমুদ্রস্নানে লাল জলে খেলি
কল্পনার শ্যাওলায় মুড়ালির ঘুন
অথচ তার শরীরে কোন এলাচের ঘ্রাণ নাই

1 টি মন্তব্য:

  1. এলাচের ঘ্রাণ না থাকা ভালো, পায়েস পায়েস লাগে। তার চাইতে শেওলার গন্ধ ভালো, তাতে রোদ আর জলের গন্ধ থাকে।

    আপনে কই? কই কই কই? আপনেরে কোথাউ দেখিনা :S :S

    উত্তরমুছুন